বিনোদন

ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়

<![CDATA[

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। দিনটি আর দশ দিনের থেকে আলাদা তাৎপর্যময়। ইতিহাসের কালজয়ী মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কোল জুড়ে এদিন বাঙালি জাতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি এসেছেন অন্ধকারে আলোকবর্তিকা হয়ে। এসেছেন মুক্তির দিশারী হয়ে। তিনি বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রূপকার। সংকটে-সংগ্রামে বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল। বঙ্গবন্ধু কন্যা যেমন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, তেমনি বিশ্বমঞ্চে সমাদৃত দুর্গতদের কণ্ঠস্বর হিসেবে। মানবাধিকারের অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি আজ মানবতার জননী। একজন শেখ হাসিনার জন্ম না হলে ইতিহাসের স্বপ্ন ভঙ্গ হতো।

শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদরের হাসু। তার রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি। চিন্তা ও কর্মে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি। বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায় চিরায়ত গ্রাম-বাংলার সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে দুরন্ত শৈশব-কৈশোর কাটানো আর ধুলোমাটি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেড়ে ওঠা একজন নির্ভেজাল বাঙালি নারী তিনি। ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সততা, সাহসিকতা, আত্মবিশ্বাস আর আত্মমর্যাদার এক সুউচ্চ শিখরে। অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা, আপসহীন নেতৃত্ব, উচ্চকিত প্রত্যয়, মানবিক মূল্যবোধ, সংগ্রামী চেতনা আর সর্বজনীন চিন্তন তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বড় বড় সংস্থা থেকে পেয়েছেন অনবদ্য অবদান ও কৃতিত্বের স্বীকৃতি। শান্তির প্রচার, অনুসন্ধান ও সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কো থেকে পেয়েছেন ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার। অর্জন করেছেন ‘মেডেল অব ডিস্টিনকশন’ ও ‘হেড অব স্টেট’ পদক। বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে পেয়েছেন ‘মাদার তেরেইজা পুরস্কার’। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দূরদর্শী ভূমিকার জন্য বিশ্বের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ অর্জন করেছেন।

খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রুতি তাকে এনে দিয়েছে ‘দ্য সিরিস মেডেল’। মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ভূষিত হয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সম্মানে। অর্জন করেছেন জাতিসংঘের ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’। নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখায় নারী রাজনীতিবিদদের  বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক উইমেন পলিটিক্যাল লিডার্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করেছে ‘রিজিওনাল লিডারশীপ’ অ্যাওয়ার্ডে। নারী  ও কন্যা শিশুদের শিক্ষা প্রসারে অবদানের স্বীকৃতি ‘পিস ট্রি’ অ্যাওয়ার্ড, শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি সাউথ-সাউথ পুরস্কার, নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউএন উইমেন প্রদত্ত ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অর্জনের মুকুটে এক একটি জ্বলজ্বলে পালক। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রেখে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘স্টেট ম্যান’।

বিশ্ব নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকে বলেছেন ‘স্টার অব ইস্ট’। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যে তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক তাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ প্রদান করে ‘মুকুট মণি’ অভিধায় ভূষিত করেছে। তিনি বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে প্রভাব বিস্তারকারী শীর্ষ ৫ ‘ডিলমেকারস’ নেতার একজন। ২০২১ সালে কপ-২৬ সম্মেলনের সময় বিবিসি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছে ‘The voice of the Vulnerable’। করোনা মোকাবিলায় সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ও বিশ্বে পঞ্চম স্থানে আসীন করে বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা অর্জন করেছেন। তিনি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা সৎ ও পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী। তিনি উন্নয়নের ম্যাজিশিয়ান। অসাধারণ সব অর্জন ও স্বীকৃতি বিশ্ব পরিমণ্ডলে তাকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য এক উচ্চতায়।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা: ভবিষ্যতের জন্য উৎসর্গ করেছেন নিজের বর্তমান

অথচ দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতির জ্যেষ্ঠ কন্যার জীবন চলার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বিপদসংকুল আর ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পথচলায় তাকে হোঁচট খেতে হয়েছে বারবার। বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টসহ অন্তত ২০ বার তাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবু তিনি জেগে উঠেছেন ফিনিক্স পাখির মতো। এদেশের মানুষের সংকটে পরিত্রাণদাত্রীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বারবার। তার জন্যই বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে নিয়ে আজ গর্বভরে বলা যায়, ‘সাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার,তবু মাথা নোয়াবার নয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ছয় বছর ছোট বোন শেখ রেহানা, স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া, পুত্র জয় ও কন্যা পুতুলকে নিয়ে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটাতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। বাবা-মা, ছোট ভাই শেখ কামাল-শেখ জামাল, আদরের ছোট্ট রাসেল আর আত্মীয়-পরিজন হারিয়ে নিদারুণ যন্ত্রণা আর অবর্ণনীয় কষ্ট বুকে চেপে একরকম বন্দি প্রবাস জীবনে থেকেও তিনি ভেবেছেন বাংলার মানুষের কল্যাণের কথা, তাদের অধিকারের কথা। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হৃত গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার বজ্র শপথে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। সে বছর ‘নিউজউইক’ পত্রিকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র ক্ষমতা দখলকালে নিহত পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

সে সময় বঙ্গবন্ধু তনয়া বলেছিলেন, তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন। এমনকি যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত থেকে বঞ্চিত হয়।‘ বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও জনগণের জন্য দেশে ফিরতে ব্যাকুল ছিলেন। শেখ হাসিনা সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘যেসব কাজ অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য বলে আমি বিবেচনা করি তার মধ্যে থাকবে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তার (বঙ্গবন্ধুর) প্রতি বাংলাদেশের জনগণের প্রীতি ও ভালোবাসা ছিল অপরিমিত। আমাকে (আওয়ামী লীগের) সভানেত্রী নির্বাচিত করে পরোক্ষভাবে তাকেই সম্মান দেখানো হয়েছে। আমি তার অসমাপ্ত কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে পার। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলার জনগণের মুক্তিদূত শেখ হাসিনা তৎকালীন সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু, জনকের খুনিদের আস্ফালন ও সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ঢাকা বিমানবন্দরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তাকে স্বাগত জানাতে সেদিন হাজির হয়েছিলেন। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছিল ঢাকার আকাশ বাতাস। ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছিল রাজধানী ঢাকা। লাখো জনতার ভালোবাসা আর সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা সেদিন বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন: মূল্যায়ন

‘৭৫ এর পর বিভিন্ন সময় সামরিক শাসক আর স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের দাম্ভিকতা ও আস্ফালনে কলঙ্কিত হয়েছিল বাংলার আকাশ-বাতাস। এ সময় বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলার সব ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ক্ষমতা ও নেতৃত্বের কোন্দলে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে বিপর্যস্ত ও বিভাজিত আওয়ামী লীগের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। প্রায় ২১ বছর রাজপথে থাকা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে ১৯৯৬ সালে আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বে পথ হারানো বাংলাদেশ আবার সঠিক পথে চলতে শুরু করে।

দীর্ঘ চার দশক দলের এবং প্রায় ১৯ বছর সরকারের নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছে। এ সময়ের মধ্যে পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও রায় কার্যকর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল চালু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু নির্মাণ, মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আনয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত করা, বিদ্যুতের উৎপাদন ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা ও প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেয়া, মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি খাতে বিপ্লব সাধন, করোনা মোকাবিলায় বিশ্বে অনবদ্য সাফল্য অর্জনসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ বলছে ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। এ সব সাফল্যের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমান বিশ্বে অন্যতম মানবিক রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈশ্বিক এই দুর্যোগের সময়েও তিনি শুধু মানবিকতার গুণে হয়ে উঠেছেন অনন্য। আপন মহিমায় শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা। তিনি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন অবলীলায়।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর কথা সবারই জানা। অসহায় রোহিঙ্গাদের মানবতার চাদরে আচ্ছাদন করে রেখেছেন তিনি। দেখিয়েছেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন। তাদের আশ্রয় দিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন, খাবার দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছেন। এ জন্য বিশ্ব পরিমণ্ডলে তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খ্যাতি অর্জন করেছেন। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনসহ এর স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে পাঁচ দফা এবং ৭৪তম অধিবেশনে চার দফা প্রস্তাব রেখেছেন। চলতি বছর জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনেও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্ব মানবতার জন্য যেমন তিনি উদার ও মানবিক, ঠিক তেমনি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তার উদারতা ও সহনশীলতা সর্বমহলে প্রশংসিত।

ফৌজদারী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ সম্প্রতি আরও ছয় মাস বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ উদ্যোগ নিয়ে তিনি উদারতা ও মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। করোনা মহামারিতে দেশের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এনেছেন মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চান বাংলাদেশ কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না, কোনো মানুষ না খেয়ে মারা যাবে না। সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি গৃহহীনদের বিনামূল্যে ঘর করে দিচ্ছেন। বৈশ্বিক দুর্যোগের মধ্যেও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের ভাতা, বেদে, দলিত ও হরিজন সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন ভাতাসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা চালু রেখেছেন।

বৈশ্বিক সংকটে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির মধ্যে ১ কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড করে দিয়ে কম দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সুযোগ করে দিয়েছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় মানবিকতার অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। 
বঙ্গবন্ধু কন্যার নিরলস প্রচেষ্টায় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ‚ড়ান্ত সুপারিশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অনুমোদন করেছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের  মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। শুধু এখানেই থেমে যান নি দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। ২০২৫ সালের মধ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং ২১০০ সালে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অদম্য প্রত্যয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তিনি বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্য নিয়েই সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবশালী রাজনীতিক ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নাম শেখ হাসিনা। রাষ্ট্র পরিচালনা এবং বৈশ্বিক দুর্যোগ ও সংকটের ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে তার সোচ্চার কণ্ঠ ও অনবদ্য নেতৃত্ব সারাবিশ্বে প্রশংসনীয় স্থান করে নিয়েছে। প্রায় দুই দশক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষে থেকে দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ হাসিনা পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্বের আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর। রাজনীতির দূরদর্শিতায়, নেতৃত্বের উৎকর্ষে, রাষ্ট্র পরিচালনার অতুলনীয় দক্ষতায়, আপসহীন দৃঢ়তায়, মানবিকতার অপূর্ব সৌন্দর্যে আর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অসাধারণ প্রচেষ্টায় তিনি আজ অনন্য উচ্চতায় আসীন।

তার ৭৬তম জন্মদিনে আমাদের প্রত্যাশা তিমির বিদারী জ্যোতির্ময় হয়ে তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুন দীর্ঘজীবন। তিনি যেন ভালো থাকেন। কারণ তিনি ভালো থাকলে বাংলাদেশে ভালো থাকবে। তিনি ভালো থাকলে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে, জয় হবে মানবিক বিশ্বের। তাইতো আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় সার্থকভাবেই বলা যায়, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়/তোমারি হউক জয়/তিমির বিদারী উদার অভ্যুদয়/তোমারি হউক জয়’।

লেখক: মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!