খেলা

ভোট কিনেও হারলেন, তাই টাকা ফেরত চাইলেন প্রার্থী

<![CDATA[

টাঙ্গাইলের বাসাইলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকা দিয়ে ভোট কিনলেও বিজয়ী হতে পারেননি রফিকুল ইসলাম সংগ্রাম নামের সাধারণ সদস্য পদের একজন প্রার্থী। ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও টাকা দিয়ে ভোট কেনার বিষয়টিও তিনি তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন।

ফেসবুকে দেয়া পোস্টে রফিকুল ইসলাম লিখেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন ১১ নং ওয়ার্ড বাসাইলে সাধারণ সদস্য পদে ৪জন প্রার্থী ছিলাম। ভোটার ছিল ৯৪ জন। দিন শেষে জানা গেল, প্রত্যেক প্রার্থী ৫০ থেকে ৬০ ভোটারকে টাকা দিয়েছে। তাদের মধ্যে আমাকে ৬০ ভোটার কথা দিলেও এর মধ্যে কমবেশি ৫৫ ভোটার আমার কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছেন। ভোট দিল মাত্র সাতজন। এই হলো ভোটারদের আসল চরিত্র।’

তিনি লিখেন, ‘পৃথিবীর সব কিছুই একবার দেখলে চেনা যায় শুধু মানুষ বাদে। আমাকে যারা ভোট দেননি মনে হয় আপনাদের নামের তালিকা হওয়ার আগে আমার টাকা ফেরত দেয়া উচিত। আপনারা না জনপ্রতিনিধি! ভোট আপনি যাকে খুশি তাকে দেন, এটা আপনার অধিকার, তাই বলে টাকা নিবেন চারজনের কাছ থেকে ভোট দিবেন একজনকে এটা কেমন চরিত্র আপনাদের। আপনাদের কাছ থেকে আপনার এলাকার জনগণ কি সেবা পেতে পারে। আল্লাহ তুমি আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করো, মানুষ হওয়ার তৌফিক দান করো।’

এদিকে সদস্য পদের এই প্রার্থীর এমন ফেসবুক স্ট্যাটাস মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। নেটিজেনরা তাকেসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা শুরু করে। স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হওয়ার পর রফিকুল ইসলাম সেটি ডিলিট করে দেন।

নির্বাচন ফলাফলে দেখা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে বাসাইলে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন শেষে আতিকুর রহমান তালা প্রতীকে পান শূন্যভোট, মিজানুর রহমান খান হাতি প্রতীকে পান ১১ ভোট, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম উটপাখি প্রতীকে পান ৭ ভোট এবং নাছির খান টিউবওয়েল প্রতীকে ৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

আরও পড়ুন: জেলা পরিষদ নির্বাচন /নেত্রকোনায় একটি ভোটও পাননি যে প্রার্থী

সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেক প্রার্থীই ৫০ জন বা ৬০ জন ভোটারকে টাকা দিয়েছেন। একজন ভোটারকে সর্বনিম্ন ২০ হাজার করে দিতে হয়েছে। আবার অনেক ভোটারকেই ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আমাকেও কিনতে হয়েছে টাকা দিয়ে ভোট। হয়ত সম্পর্কের কারণে আমার কম টাকা লেগেছে তবে ২০ হাজারের নিচে কেউ টাকা নেয়নি। একজন ভোটার আমার সামনে খাম খুলে টাকা গুণে নিয়েছে। টাকা কম থাকায় সে আরও ৫ হাজার টাকা চেয়ে নিয়েছে। একজন ভোটার চারবার বিক্রি হয়েছে। এমন হলে নির্বাচন কিভাবে করবো। তবে ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিবো না।’

এ বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উমর ফারুক বলেন, ‘ভোট কেনা জঘন্য অপরাধ। এটা অন্যের অধিকার টাকা দিয়ে কিনে নেয়া। একজন মানুষরে মানবিক সত্তাকে হরণ করা অপরাধ। এখন এ বিষয়গুলো প্রকাশ্যেই ঘটছে। এক সময় যারা ভোট কিনতো বা বিক্রি করতো তারা এটাতে লজ্জাবোধ করতো। এখন ওই মূল্যবোধগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এটাকে স্বাভাবিক সহনশীল মাত্রায় মানুষ বিবেচনা করছে। যারা রাজনৈতিক ব্যক্তি বা ভোট দাতা রয়েছেন তাদেরকে মানবিক, সামাজিক ও নৈতিকভাবে সচেতন এবং সতর্ক হতে হবে। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।’ ভোট কেনাবেচার ব্যাপারে আইন আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!