বাংলাদেশ

মন খারাপ দূর করে হ্যাপি হরমোন!

<![CDATA[

হুটহাট মন খারাপ হয়ে যায়? অনেক চেষ্টা করেও ভালো করতে পারেন না? কিন্তু মন ভালো রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। মনখারাপের কারণে বেড়ে যেতে পারে অনেক রোগের আশঙ্কা। হঠাৎ করে মন খারাপ হয়ে যাওয়া, রাগ হওয়া, কান্না পাওয়া আবার চট করেই মনে আনন্দ অনুভব করার মতো অনুভূতিগুলোকে বলে ‘মুড সুইং’।

বহুদিন ধরে মন খারাপের মতো সমস্যার শিকার হলে শরীরের প্রতিটি অংশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে, যে কারণে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়াসহ ব্রেন পাওয়ার কমে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। সেই সঙ্গে ইনসোমনিয়ার মতো সমস্যাও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে ডিপ্রেশনের মতো রোগে ভুগলে ব্রেনের প্রদাহের মাত্রা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রেন সেলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। আর এমনটা হতে থাকলে অ্যালঝাইমারস, ডিমেনশিয়া এবং পার্কিসনের মতো জটিল মস্তিষ্কঘটিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে আয়ুও কমে চোখে পরার মতো।

এখন প্রশ্ন হলো বর্তমান সময়ে সিংহভাগের জীবনই এত মাত্রায় স্ট্রেসফুল যে মানসিক অবসাদের থেকে দূরে থাকাটা সম্ভাব নয়। তাহলে উপায়?

শরীরের মতো মনও নানাভাবে জানান দেয়, সে ভালো নেই। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সামান্য সচেতন হলে এ-ও বোঝা যাবে, মন কেন ভালো নেই। আমাদের মেজাজ, অনুভূতি, ভালো লাগা নিয়ন্ত্রণ করে চারটি হরমোন। বিশেষজ্ঞরা এদের নাম দিয়েছেন ‘হ্যাপি হরমোন’।  হরমোন মূলত শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক বার্তাবাহক। মানবশরীরের অনেকগুলো হরমোনের মধ্যে চারটি মৌলিক হরমোন হলো ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন— এগুলোই হ্যাপি হরমোন। শরীরে এদের মাত্রা বেড়ে গেলে আমরা হাসি-খুশি এবং প্রাণবন্ত থাকি। আর কমে গেলে এর উল্টোটা ঘটে অর্থাৎ মন খারাপ হয়। খাবার-দাবারের পাশাপাশি কিছু অভ্যাস আমাদের শরীরে হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়।

এই হরমোনগুলো আদতে মস্তিষ্ক ও শরীরের উপরে কতটা কার্যকর, তা সমস্যায় পড়ার পর উপলব্ধি করা যায়। এদের কার্যকারিতা খুবই সূক্ষ্ম অথচ প্রভাবশালী। এই নিউরোট্রান্সমিটারগুলোর ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি।

ডোপামিন: ‘গুড ফিলিং’

ডোপামিন হরমোনকে বলা হয় ‘গুড ফিলিং’ হরমোন। এটি অনেকাংশে আমাদের ভালো লাগা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রেম ও প্রশংসা শরীরে ডোপামিন বাড়িয়ে দেয়। মানুষ প্রেমে পড়লে, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটালে, কোনো চ্যালেঞ্জ পূর্ণ করলে, অভিনন্দন বার্তা পেলে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে সরাসরি ডোপামিন নিঃসরণ হওয়া শুরু হয়। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ডোপামিনে মোট ২০০ প্রকার রিসেপ্টর জিন থাকে। যা ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং তাৎক্ষণিক মেজাজ ভালো করে দেয়। তাছাড়া পুষ্টিকর খাবার ও শরীরচর্চার পাশাপাশি নিজের প্রতি যত্নবান হলে, কাজ বা চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে শেষ করলে, লক্ষ্য অর্জন করলে, নিজের জয় উদ্‌যাপন করলে শরীরে ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। মন ভালো করতে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন কোকোয়া সিড থেকে তৈরি ডার্ক চকলেট খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।

সেরোটোনিন: বিপাকীয় নিয়ন্ত্রণ

মানব শরীরের বিপাকীয় নিয়ন্ত্রণ সেরোটোনিনের হাতে। পাশাপাশি, মেজাজ, আহার-নিদ্রা, ক্ষুধা, মনে রাখা ইত্যাদি কার্যাবলি সেরোটোনিনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই হরমোনটি টেনশন বা দুশ্চিন্তা কমাতেও ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যিনি যত প্রকৃতির কাছাকাছি থাকবেন তার শরীরে তত বেশি সেরোটোনিন উৎপন্ন হবে। সকালবেলায় রৌদ্রস্নান, জগিং বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, সাঁতার বা সাইকেলিং এবং যোগব্যায়ামের অভ্যাস করলে শরীরে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া পালংশাক, লেটুস, বিট, গাজর, বিভিন্নপ্রকার বাদাম শরীরে সেরেটোনিনের মাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুন: অতীতের রেকর্ড ভাঙল কাতার

অক্সিটোসিন: ‘লাভ হরমোন’

অক্সিটোসিনের ডাকনাম ‘লাভ হরমোন’। এটি আমাদের মনে প্রেমানুভূতি, ভালোবাসা এবং বন্ধন তৈরি করে। পোষা প্রাণীর প্রতি যে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয় সেটির জন্যেও অক্সিটোসিন দায়ী। সম্পর্কের গভীরতা নির্ধারণে অক্সিটোসিন সরাসরি ভূমিকা রাখে। কার ওপর ভরসা করা যাবে কার ওপর যাবে না সেটি ঠিক করে দেয় অক্সিটোসিন হরমোন। প্রিয়জনের হাত ধরে হাঁটলে, পরিবারের সাথে সময় কাটালে, বন্ধু-বান্ধবের সাথে গল্প-আড্ডায় মাতলে, পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটালে শরীরে অক্সিটোসিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

এন্ডোরফিন: পেইন কিলার

এন্ডোরফিনকে বলা হয় পেইন কিলার হরমোন। এই হরমোন শারীরিক এবং মানসিক ব্যাথা উপশম করে। কেউ যখন শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন সক্রিয় হয়। ফলে ব্যক্তি সেই আঘাত থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে। শরীরে এন্ডোরফিনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ব্যক্তির কোনো শারীরিক বা মানসিক আঘাত থেকে বের হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এটি পরোক্ষভাবে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও নিয়ন্ত্রণ করে।

আরও পড়ুন: ৩,২০০ মেগাপিক্সেলের ছবি তুলবে যে ডিজিটাল ক্যামেরা

শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন বাড়ানোর একটাই উপায় – প্রাণ খুলে হাসা। প্রাণ খুলে হাসলেই এন্ডোরফিনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। জোকস এবং রম্য সাহিত্য পড়লে, জীবনে ঘটে যাওয়া মজার ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবলে, প্রাণ খুলে আড্ডা দিলে এন্ডোরফিনের মাত্রা বাড়ে।

আসলে প্রতিটি মানুষই নিজের জীবনে সুখে থাকতে চান। দেখা গেছে যে নিজেদের কিছু ভুলের কারণেই মানুষের জীবনে থাকে দুঃখের ঘনঘটা। তবে একটু সচেতনতায় হয়ে যেতে পারে সমস্যার সমাধান। এমনকী দূরে থাকতে পারে দুঃখ। একটি প্রবাদ আছে, হাসলে আয়ু বাড়ে। হাসির ফলে শরীরের হরমোনাল ভারসাম্য সুস্থিত হয়। যার ফলে জীবনকাল বা আয়ু বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার এবং শরীরচর্চা করা খুবই জরুরি।
 

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!