মসজিদ কমিটি থেকে ঘুষ নেয়ার ৩ বছর পর ফেরত দিলেন আ. লীগ নেতা
<![CDATA[
জয়পুরহাটে মসজিদ উন্নয়নের নামে ৩ লাখ টাকার বরাদ্দ এনে দেয়ার আশ্বাসে তিন বছর আগে মাহবুবুর রহমান (৪৫) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা ২৬ হাজার টাকা ঘুষ নেয় মসজিদ পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে। তিন বছরেও সে অনুদানের কোনো খোঁজ নেই। অবশেষে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের হস্তক্ষেপে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন অভিযুক্ত সে নেতা। সে সঙ্গে ওই ইউনিয়নের শতাধিক অসহায় মানুষকে সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার দাবী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) জুম্মার নামাজ শেষে কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান মসজিদে উপস্থিত হয়ে মাহবুবুর রহমানের নেয়া ২৬ হাজার টাকা মসজিদ কমিটির কাছে হস্তান্তর করেন। অভিযুক্ত মাহবুব জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হারুঞ্জা নেকিপাড়া গ্রামের মৃত. মোজাম্মেল হকের ছেলে।
এলাকাবাসী ও মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, তিনি ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সদস্য এবং চেয়ারম্যান আলী আকবর মণ্ডলের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল চালক। এ সুবাদে হারুঞ্জা পূর্ব পাড়া জামে মসজিদের উন্নয়নের কথা বলে কমিটির কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ এনে দেয়ার আশ্বাসে ২৬ হাজার টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছরেও বরাদ্দের সেই টাকা না পাওয়ায় বিষয়টি জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে জানায় মুসল্লিরা। অবশেষে শুক্রবার জুম্মার পর কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমানের উপস্থিতিতে টাকা ফেরত দেয়া হয়।
এ সময় এস এম মঈনুদ্দিন মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, এ সরকারের সময়ে উন্নয়নের জন্য কাউকে টাকা দিতে হয় না। তাই আপনারা আর এমন ভুল করবেন না।
কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, ওসি মারফত হুইপ স্বপন ভাইয়ের একটি মেসেজ পেয়ে ওই ছেলেকে খুব দ্রুত টাকা যোগাড় করতে বলি। অবশেষে শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে কমিটির কাছে সেই ২৬ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বারবার টাকা ফেরত চাওয়ার পরও মাহবুবুর রহমান তা গ্রাহ্য করেননি। এরপর চেয়ারম্যান আলী আকবর মণ্ডলকে একাধিক বার বলেও কোনো কাজ হয়নি। তাই অবশেষে জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে হুইপ স্বপন সাহেবকে বিষয়টি জানাই। এরপরই খুব দ্রুত ওই টাকা ফেরত পাই।
আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় গাঁজাসহ যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
এ দিকে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার খবরে জামে মসজিদ চত্বরে অনেক গরিব অসহায় নারী-পুরুষ ভিড় করেন। তাদের অভিযোগ- ওই ইউনিয়নের শতাধিক অসহায় মানুষকে সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বছরের পর বছর হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মাহবুবুর রহমান। কিন্তু আজও কাউকে কোনো কাজ করে দিতে পারেনি।
হারুঞ্জা ফকির পাড়া গ্রামের বাসিন্দা নওশাদ হোসেনের স্ত্রী বিউটি বেগম বলেন, বয়স্ক ভাতার কথা বলে আমার কাছ থেকে দু’হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে। অথচ দীর্ঘ দিনেও তা করে দেয়নি।
ভুক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিনামূল্যে মাসে ৩০ কেজি চালের কার্ড করে দেয়ার কথা বলে ২৫০০ টাকা নেয়। অথচ কয়েক বছরেও কোনো খোঁজ নেই।
আরও এক ভুক্তভোগী হারুঞ্জা পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত তছির উদ্দীনের স্ত্রী মোকলেদা বেওয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, মাহবুবুর রহমান সম্পর্কে আমার ভাগ্নে। সে প্রথমে একটি সরকারি বাড়ি করে দেয়ার আশ্বাসে ৭ হাজার টাকা নেয়। এরপর বয়স্ক ভাতা করে দেয়ার জন্য দু’হাজার টাকা এবং সবশেষে ছেলের বউয়ের গর্ভবতী কার্ড করে দেয়ার কথা বলে আরও দু’হাজার টাকা নিয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত কিছুই পাইনি।
স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমাদের এসব টাকা ফেরত পেতে মাহবুবুরের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মাহবুবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর মণ্ডল বলেন, আমি অসুস্থ থাকা অবস্থায় তাকে মোটরসাইকেল চালক হিসেবে রেখেছিলাম। কিন্তু এসব অভিযোগ শোনার পরপরই তাকে সরিয়ে দিয়েছি।
]]>