বিনোদন

মিয়ানমার সংকট: বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যেভাবে জান্তার সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে

<![CDATA[

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে যে বৌদ্ধ চরমপন্থার উত্থান ঘটেছে, বর্তমানে তার সুফল ভোগ করছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। এখন থেকে কয়েক বছর আগে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনযজ্ঞে যে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পুরোহিতরা নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারাই এখন জান্তার টিকে থাকার শক্তি যোগাচ্ছে।

ওপরের ছবিটা ভাল করে খেয়াল করলে বিষয়টি সহজেই স্পষ্ট হবে। কমলা বা জাফরানি রংয়ের সেলাইবিহীন পোশাক পরা এক ভিক্ষু হাত উচিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। মনোযোগ দিয়ে সেই বক্তব্য শুনছে সামনে সারিসারি দাঁড়ানো একদল সশস্ত্র যোদ্ধা। পাশেই মাটিতে বসে বক্তব্য শুনছেন আরও একদল বেসামরিক মানুষ।

চিনডুইন নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে ছবিটা চলতি মাসের শুরুর দিকে (৮ ডিসেম্বর) প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, ইউ ওয়াছাওয়া নামে এই বৌদ্ধ ভিক্ষু মূলত জান্তা সরকারের পক্ষে সমর্থন গড়ে তুলতে এই সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইং প্রদেশের একটি মঠের প্রধান ওয়াছাওয়া। সম্প্রতি ওই মঠের সামনে একটি সমাবেশের আয়োজন করেন তিনি।

রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, সেনাদলের সামনে বর্মিজ ভাষায় বক্তব্য প্রদানকালে ওয়াছাওয়া থেকে থেকেই একটি স্লোগান দেন। যার অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘আমাদের মনোবল কেম?’ সশস্ত্র যোদ্ধাদের সমাবেশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে তার জবাব আসে, ‘লৌহদণ্ডের মতো দৃঢ়’। যোদ্ধাদের এই দলটি মূলত ওয়াছাওয়ার গড়ে তোলা সশস্ত্র বাহিনীর একটি অংশ। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রতি অনুগত তারা।

মিয়ানমারের কট্টর জাতীয়তাবাদী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব রেস অ্যান্ড রেলিজিয়ন (এপিআরআর)। বাংলায় অর্থ করলে দাঁড়ায়, ধর্ম ও জাতিসত্তা রক্ষার সংগঠন বা সংস্থা। স্থানীয় বার্মিজ ভাষায় সংগঠনটির নাম মা বা থা। এর অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ওয়াছাওয়া। গত বছর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর সাগাইং অঞ্চলজুড়ে এমন অসংখ্য সভা-সমাবেশ করেছেন তিনি।

এস সমাবেশের ছবি ও ভিডিও প্রায়ই সেনা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করা হয়। তাতে যেসব দৃশ্য উঠে আসে, তা বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে কয়েক দশক আগে অনেকটা অকল্পনীয়ই ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেসবই এখন ঘটছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মিয়ানমারের কুখ্যাত সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৌদ্ধ ভিক্ষু-পুরোহিতরা যে রীতিমতো জোট গড়েছেন, ওয়াছাওয়া তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।

আরও পড়ুন: চীন-তাইওয়ান দ্বন্দ্বের শেষ কোথায়

মিয়ানমারের এই বৌদ্ধ ভিক্ষু তাদের অন্যতম যারা এক সময় সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। যে সামরিক একনায়করা দশকের পর দশক ধরে জনগণের সব অধিকার ভূলুন্ঠিত করেছে, সেই একনায়কদের উৎখাতে রাজপথে নেমেছিলেন। ১৯৮৮ সালে নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, সেই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ভিক্ষুরাই।

এরপর ২০০৭ সালে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, যা মিয়ানমারের ইতিহাসে ‘স্যাফরন রেভ্যুলেশন’ বা জাফরান বিপ্লব হিসেবে ইতিহাসে খ্যাত, সেই বিপ্লবের পুরোভাগে ছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। সেই ভিক্ষুদের অনেকেই আজ একনায়ক সরকার তথা জান্তার পাড় সমর্থক।

রয়টার্স বলছে, এই যে পরিবর্তন তা মূলত সেনাবাহিনীর গত কয়েক বছরের নিবিড় প্রচেষ্টা ও তদবিরের ফল। সেনা কর্তৃপক্ষ গত প্রায় দুই বছর ধরে শীর্ষ ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কখনও দামী উপহার-উপঢৌকন দিয়ে। আবার কখনও কট্টর জাতীয়তাবাদ, ইসলামবিদ্বেষ ও মুসলিমবিরোধী ঘৃণা উসকে দিয়ে।  

গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীর সহযোগী ভিক্ষুরা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কট্টর জাতীয়তাবাদী এসব ভিক্ষুকে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াতে দেখা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে, অহিংসা ছেড়ে সহিংস পথ বেঁছে নিয়েছেন ভিক্ষুরা। গত এক দশকে মিয়ানমারজুড়ে মুসলিমবিরোধী অসংখ্য সহিংসতা উসকে দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে ২০১৩ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যাতে অন্তত ২৫ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়। এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে ভয়াবহ রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ। যাতে কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয় যার বেশিরভাগই মুসলিম। আর এখন একটা অনির্বাচিত ও অবৈধ জান্তা সরকারের পক্ষ নিয়ে সাধারণ জনগণকে দমন-পীড়নে সহযোহিতা দিয়ে যাচ্ছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটা নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের কুখ্যাত সেনাবাহিনী, তাতমাদো। এর ফলে কয়েক দশকের সেনাশাসনের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে যে গণতান্ত্রিক শাসনের সূচনা হয়েছিল তা হঠাৎ থমকে যায়।

তবে সেনাবাহিনীর এই অবৈধ ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে শিগগিরিই প্রবল গণআন্দোলন গড়ে ওঠে। কিন্তু এক সময় যে ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারা গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন, সেই তারাই এবারের আন্দোলনে বিস্ময়করভাবে অনুপস্থিত। তারা সাধারণ জনতার আন্দোলন দমাতে সেনা কর্তৃপক্ষের সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।        

মূলত অবৈধ সামরিক শাসনকে ‘বৈধ’ করতে জান্তা সরকার ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মিয়ানমার জান্তা। আর তাতে ‘দাবার গুটি’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন ওয়াথাওয়ার মতো ভিক্ষুরা। এসব ভিক্ষুদের অধীনে হাজার হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ওয়াথাওয়া নিজেও তার অধীনে সশস্ত্র বাহিনী থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

আরও পড়ুন: নতুন বছরেও ভোগাতে পারে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে

হাজার হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা নিয়ে এসব ভিক্ষুরা এখন চলমান গণতন্ত্রপন্থি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমাতে জান্তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, তারা গণতন্ত্রপন্থি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও লড়াই করছেন।

চলতি বছর মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ সাগাইংয়ে শতাধিক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় জান্তা সেনারা। হত্যা করা হয় বহু বেসামরিক সাধারণ নাগরিককে। এসব ঘটনাকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এসব অপরাধের পেছনে ভিক্ষু নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র যোদ্ধাদেরও হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়।

সম্প্রতি সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের একাধিক বক্তব্য ও বিবৃতিতে গ্রামগঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী গঠনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। নভেম্বরে এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানায়, কিছু গ্রামে গ্রামবাসীর দাবির কারণে ভিক্ষুদের নিয়ে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয়েছে। তবে তাদেরকে অস্ত্র দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছে সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে এও দাবি করা হয়েছে, তারা বেসামরিক লোকজনের ওপর নয়, ‘সন্ত্রাসীদের’ ওপর হামলা চালাচ্ছে।  

অহিংস পথ ছেড়ে সহিংস সংঘাতে
সম্প্রতি ওয়াথাওয়া ও কট্টর জাতীয়তাবাদী অন্যান্য ভিক্ষুদেরকে প্রায়ই সেনাদের পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে। অস্ত্র বহন করছেন তারা। ভিক্ষুদের এসব ছবি স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, এসব ছবি যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘মিয়ানমার উইটনেস’র মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। এই সংস্থাটি জানিয়েছে, ওয়াথাওয়ার নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের কান্তবালু এলাকায় অবস্থিত একটি মঠে এসব যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

ওয়াথাওয়ার নেতৃত্বে যে একটি সশস্ত্র ভিক্ষু বাহিনী রয়েছে, রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তা নিজেই নিশ্চিত করেছেন তিনি। সম্প্রতি ওই সাক্ষাৎকারে ওয়াথাওয়া জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইরত গণতন্ত্রপন্থি বিদ্রোহী বাহিনীকে ‘একদল ঠগ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘কান্তবালু অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও স্থানীয়দের সুরক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী গড়েছেন তিনি। তার দাবি, জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে।  ভিক্ষুরাও ছাড় পাচ্ছেন না। আর এ কারণেই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন বলে যুক্তি দেন ওয়াথাওয়া। তার কথা, ‘আমার পক্ষে যা করার আমি তাই করছি। সশস্ত্র বাহিনী গড়ে আমি কোনো ভুল করিনি।’

গত বছরের এপ্রিল-মে মাসের দিকে জান্তাবিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে পিপল’স ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (পিডিএফ) গড়ে তোলা হয়। যার নেতৃত্বে রয়েছে গণতন্ত্রপন্থি ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এইজিইউ)। 
এরপর গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে পিডিএফ। লড়াইয়ে উভয় পক্ষের বহু যোদ্ধা হতাহত হয়েছে। গণতন্ত্রপন্থি বিদ্রোহী যোদ্ধারা বলছে, তারা কোনো বেসামরিক নাগরিককে টার্গেট করছে না। তারা শুধুমাত্র সরকারি বাহিনী ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে।  

১৯৮০-এর দশকের জাফরান বিপ্লব বলে পরিচিত সামরিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যেসব ভিক্ষু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের অন্যতম হোতাভারা। বর্তমানে নরওয়েয় নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন তিনি। রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে এই ভিক্ষু বলেনে, যেসব ভিক্ষু জান্তাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতায় অংশ নিয়েছেন, তারা তাদের ধর্মের প্রাথমিক নীতিই ভঙ্গ করছেন। তিনি বলেন, ‘বৌদ্ধধর্মে জীব হত্যা অমার্জনীয় অপরাধ।’

জান্তার শাসনে নিরবতা
মিয়ানমারের শীর্ষ বৌদ্ধ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ মা হা না। দেশের এই চলমান সংকটে শুরু থেকেই নিরব সংগঠনটির নেতারা। গত বছরের সেনা অভ্যুত্থানের কিছুদিন পরই সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এর চেয়ারম্যান। রয়টার্স বলেছে, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নিয়ে যেসব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে তার সঙ্গে তাদের সংযোগ ও জান্তা সরকারকে সমর্থনের ব্যাপারে মন্তব্যের অনুরোধ করা হলেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া দেয়া হয়নি।  

আরও পড়ুন: দুর্দশা পিছু ছাড়েনি আফগানদের

ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আরও যারা জান্তা সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ১৯৮৮ সালের জাফরান বিপ্লবে অংশ নেয়া আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সিতাগু। এখন তিনি জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইংকে নিয়মিত সঙ্গ দিচ্ছেন। এমনকি হ্লাইংকে তিনি ‘দয়ালু রাজা’ বলেও বলেও ডাকেন। ২০১৭ সালের আগস্টে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হলো এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা বিতাড়িত করা হলো তখন রীতিমতো বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে এসব কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গান সিতাগু।  

মিয়ানমারে তিন লক্ষাধিক ভিক্ষু রয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে তাদের সবাই জান্তা সরকারের সমর্থক নন। গত বছর সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনার নজরদারি ও দমনপীড়নের মধ্যেও প্রায় সপ্তাহেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কেন্দ্রখ্যাত মান্ডালেসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গেরুয়া বসন পরিহিত ভিক্ষুরা এসব বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। তবে এবার তাদের সংখ্যা আশির দশকের জাফরান বিপ্লবের তুলনায় খুবই নগন্য।  

রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে ভয়ঙ্কর সংগঠন মা বা থা 
বৌদ্ধধর্মের বাণী ‘অহিংসা পরম ধর্ম’, ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ এখন শুধুমাত্র শাস্ত্রীয় বাণীতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের বৌদ্ধদের বেলায় এ কথা চরম সত্য। হিংসাই যেন এখন তাদের মূল উপজীব্য। মিয়ানমারের বৌদ্ধরা অহিংসার পরিবর্তে সহিংসতাকে বেছে নিয়েছে। সংসারত্যাগীরা এখন হিংসা ও হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। মিয়ানমারের এমনই এক ভিক্ষু সংগঠনের নাম মা বা থা।

সংস্থার একটি শক্তিশালী কমিটি আছে, যা ২৭ জুন ২০১৩ সালে জন্মলাভ করে। ভিক্ষুদের এই সংগঠনটি অনুরূপ দেশী ও বিদেশী ভিক্ষুদের সাথেও কাজ করে। যেমন স্থানীয় ৯৬৯ মুভমেন্ট ও শ্রীলঙ্কার বুদু বালা সেনা। ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি মান্দালেতে ভিক্ষুরা সমবেত হয়ে বার্মায় থেরাভাদা বৌদ্ধধর্ম বা বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ রক্ষার জন্য কাজ করার শপথ নেন। মা বা থার কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৫২ জন সদস্য রয়েছে। অশ্বিন বিরাথু মা বা থার নামকরা সক্রিয় সদস্য ছিলেন, যিনি পরে মা বা থার ভাইস চেয়ারম্যান পদ লাভ করেন।

বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে সংসারবিরাগী ও ভোগবিলাসত্যাগী ভিক্ষুরা রাজনীতির আসর গরম করে তোলেন। তারা অং সান সু চির রাজনৈতিক প্লাটফর্ম এনএলডির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন। মা বা থার অভিযোগ, অং সান সু চি বৌদ্ধ মতাদর্শের বিরোধী ও মুসলিমদের পক্ষের নেত্রী। অবশ্য মিয়ানমারের মুসলিমদের বেশিরভাগই সু চির এনএলডির সমর্থক।

অনেকেই মনে করেন, মা বা থার উত্থানের পেছনে সামরিক শাসকদের সমর্থন ছিল। উগ্র জাতীয়তাবাদ থেকে সহিংস আন্দোলন হলে প্রয়োজনে ভিক্ষুরা যেন গুলি চালাতে পারেন সেজন্য তাদের গোপনে সামরিক প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে নির্বাচনে সু চি জয়লাভ করলে মা বা থা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। অহিংসা থেকে সহিংসার পথ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দিকে এগোয়।

আরও পড়ুন: ব্রিটিশ রাজনীতিতে অস্থিরতা, ঋষি সুনাকের ভবিষ্যৎ

সু চির উত্থানের পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন, মা বা থার পতন হবে। কিন্তু মা বা থা রয়েই গেল, সহিংস আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকল। তবে নির্বাচনের পর বেশ কিছু দিন মা বা থার কর্মীরা ও অশ্বিন বিরাথু প্রায় আত্মগোপন করেছিলেন।

এরপর ২০১৭ সালের আগস্ট। ভিক্ষুরা সরাসরি রোহিঙ্গা নিধনে নেমে পড়েন, সাথে উগ্র বৌদ্ধরাও অংশ নিলো। বিশেষ করে ৬০ শতাংশ যুবক মা বা থার সাথে লুণ্ঠন-হত্যায় অংশ নিলো। সেনাবাহিনী প্রথমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। এরপর একসময় সেনাবাহিনীও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করল। সু চি প্রতিবাদ করতে সাহস করলেন না। তার ভয়, মা বা থা ও সেনাশাসক মিলে অভ্যুত্থান করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। যদিও কয়েক বছর দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত সেটাই ঘটল।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!