মুহুরী নদীর পাড়ে ‘হিম হেঁয়ালির’ উষ্ণ আমেজ
<![CDATA[
শীত আসে, শীত যায়। শীতের রুক্ষতায় কাঁপে নগর শহর গ্রাম পুরো দেশ। এবার শীতের সেই রুক্ষতাকে দূরে সরিয়ে, স্নিগ্ধতার স্পর্শে কুয়াশার চাদর গায়ে জড়িয়ে ফানুস উড়িয়ে ফেনীর মুহুরী নদীর পাড়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো ভিন্ন ধরনের আয়োজন ‘হিম হেঁয়ালি’ উৎসব।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) বেলা শেষে রাত গড়াতেই ফেনীর ছাগলনাইয়ার মহামায়া ব্রিজের পাশে মাটিয়া গোদা গ্রামের মুহুরী নদীর পাড়ে জমে ওঠে ‘হিম হেঁয়ালির’ উষ্ণ আমেজ।
আয়োজকরা জানান, ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের মহামায়া ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে গথিয়া গ্রামে ‘হিম হেঁয়ালি’ পূর্বনির্ধারিত ভেন্যু ছিল। শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠানস্থলের সাজসজ্জার কাজ শুরু করলেই বাধা আসে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে ফানুসের আলোয় উৎসবের আমেজ
অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা পাশের মাটিয়া গোদা গ্রামের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক নুরুল করিম বলেন, আয়োজনকে ঘিরে দিনভর নানামুখী সামাজিক বাধা ছিল। গথিয়া গ্রামের সমাজপতিরা তাদের গ্রামে মসজিদ মাদ্রাসা থাকার অজুহাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে নিষেধাজ্ঞা দেন। পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় চাঁদগাজী হাইস্কুল ও কলেজের সাবেক ছাত্র সংসদের সবাই আমার পাশে দাঁড়ান। একপর্যায়ে আমরা ভেন্যু পরিবর্তন করে ব্রিজের পূর্ব পাড়ে মাটিয়া গোদা গ্রামে নদীর পাড়ে বিকেলে নতুন করে সাজসজ্জার কাজ শুরু করি। ফলে সন্ধ্যার আলো প্রজ্বলন ও পিঠাপুলির পসরা সাজানো হয়নি। আমরা চেয়েছি সমাজের কুসংস্কার ও গোঁড়ামির অন্ধকার কাটিয়ে আলো ফোটাতে। একবার যখন আলো ফুটেছে আগামীতেও প্রতিবছর শীতে আরও বড় পরিসরে ‘হিম হেঁয়ালি’ হবে বাঙালিয়ানার বর্ণিলতায়।
তিনি বলেন, সব কিছু নতুন করে গুছিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আয়োজনের শুরুতেই হিম হাওয়ায় যখন সবাই জবুথবু; তখন আকাশের ফানুস আর আতশবাজির আলোর ঝলকানিতে উত্তেজনার উত্তাপ বিজয় উল্লাস হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। পোশাকে শীত বেঁধে বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছুটে আসেন সব বয়সি নারী পুরুষ। এ সময় কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি শিল্পীরা বাঙালিয়ানা গানে গানে মাতিয়ে রাখেন নদীর পাড়ের হিম হেঁয়ালি। ব্যতিক্রম এমন আয়োজনে খুশি দর্শক স্রোতা সবাই।
আরও পড়ুন: শীত আমেজে বাজারে বেড়েছে নারিকেল-গুড়ের কদর
পরিবারের সঙ্গে আসা ১০ বছর বয়সি রনি বলেন, ঠান্ডাও লেগেছে। ভালোও লেগেছে। বেশি নাচানাচি করতে পারিনি। আকাশে আগুন বল, তারা বাতি অনেক ভালো লাগছে।
চাঁদগাজী গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাজনীন বলেন, সব অনুষ্ঠান শহরকেন্দ্রিক। অজপাড়া গাঁয়ে এমন আয়োজন সত্যি মুগ্ধ হয়েছি। উপভোগ করেছি। সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে সবাইকে এমন সব আয়োজন নিয়ে গ্রামেই আসতে হবে।
শীতে জবুথবু ষাটোর্ধ্বও কৃষক খায়েজ মিয়া বলেন, ভালো লেগেছে। তবে জারি সারি কবি গান না হলে জমবে না।
গভীর রাতে আয়োজন শেষে হিম হেঁয়ালির রেশ নিয়ে গ্রামের মানুষ বাড়ি ফেরেন।
]]>




