যে ভয়ংকর তথ্য উঠে এলো গবেষণায়
<![CDATA[
গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েই চলেছে। বিষয়টি নিয়ে আরও ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় করা ও গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর উষ্ণতা আগামী দশকের মধ্যে শিল্পবিপ্লব যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা পেরিয়ে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা তথ্যটি দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা গেলে তা মানবজাতিকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে সাহায্য করবে। বিশ্ব নেতারা ২০১৫ সালে ব্যাপক নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিশ্বকে উষ্ণতা বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সর্বশেষ পূর্বাভাস বলছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। প্রতিবেদনে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও পরিবেশের উপর এর বিপর্যয়কর প্রভাব নিয়ে বিপদ ঘণ্টা শোনা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষকরা দেখেছেন যে, পৃথিবী ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার মাত্রাও ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে এবং চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদই সেটা হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা এটাকে পৃথিবীর জন্য একটি ‘টিপিং পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যেখান ফেরার আর কোনো পথ থাকবে না।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যে পরামর্শ দিলেন বিল গেটস
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী ও গবেষণাটির সহ-লেখক নোয়া ডিফেনবাঘ বলেছেন, ‘এক ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের ফলে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের ওপর ইতোমধ্যে যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে তার স্পষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’
এ গবেষক আরও বলেন, নতুন একটি পদ্ধতি (এআই) ব্যবহার করে করা নতুন এই গবেষণার ফলে সেসব প্রমাণ আরও শক্তিশালী হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আমরা অবশ্যই জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের মুখোমুখি হব এবং আমরা যে প্রভাব ইতোমধ্যে অনুভব করছি তা আরও তীব্র হবে।
গবেষণায় এক ধরনের কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু বিশ্লেষণ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতিকে প্রশিক্ষণ দেন বিজ্ঞানীরা। এরপর সেটাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন শিল্পবিপ্লব যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করতে বলা হয়।
ফলাফলে দেখা যায় যে, ২০৪৪ ও ২০৬৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন চিহ্ণিত দুই ডিগ্রির মাত্রা অতিক্রম করার প্রায় ৭০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি এক্ষেত্রে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন দ্রুত হ্রাস পেলেও।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন কী, কীভাবে ও কেন ঘটছে?
গবেষণার মডেলটি কতটা সঠিক তা বোঝার জন্য ঐতিহাসিক পরিমাপগুলোও গবেষণা পদ্ধতিতে যুক্ত করা হয়। ১৯৮০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ২০২২ সাল পর্যন্ত রেকর্ড করা ১.১ ডিগ্রি উষ্ণতার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে।
গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তাপমাত্রার বৃদ্ধিকে শিল্পযুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার কোনো বিশ্বাসযোগ্য পথ আর বাকী নেই। সংস্থাটি আরও বলে, কার্বন নিঃসরণ কমাতে না পারার এই ব্যর্থতা মোচন করতে ও জলবায়ু সংকটকে সীমিত রাখতে এখন একমাত্র পথ হলো সমাজের দ্রুততর রূপান্তর।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রাক শিল্প যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ও সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে সম্মত হয়। জাতিসংঘের জ্বালানি বিষয়ক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিশ্বের দেশগুলোর ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মানবিক সংকট বাড়াবে ২০২৩ সালে
কোন দেশ কতটা কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আর কতটা তারা করতে পেরেছে; তাও তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। বলা হয়, অগ্রগতি হয়েছে ‘দুঃখজনকভাবে অপর্যাপ্ত’। এখন যদি ২০৩০ সাল পর্যন্ত পূর্ণভাবেও প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়, তারপরও বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২.৫ ডিগ্রিতে পৌঁছাবে, যার অর্থ হবে বিশ্বজুড়ে চরম বৈরী আবহাওয়া।
]]>




