রাত ১২টা থেকে মধুমতী সেতুতে চলবে গাড়ি, চলবে রিকশাও
<![CDATA[
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনের পর সোমবার (১০ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে কালনায় মধুমতী সেতুতে চলবে গাড়ি। অবশেষে দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন সেতুটি কয়েক ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা ঘাটে মধুমতী নদীতে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর নামকরণ করা হয়েছে ‘মধুমতী সেতু’। সেতু উদ্বোধনের খবরে আনন্দে ভাসছেন নড়াইলসহ আশপাশের জেলার মানুষ। সেতুর দুই তীরে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবের আমেজ। রোববার থেকে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছেন সেতুটি দেখার জন্য।
একটি সেতু যেন জাদুর কাঠি। রাজধানীর সঙ্গে যশোর-খুলনা এলাকার দূরত্ব কমবে ১২০ কিলোমিটার। নির্মাণশৈলীতেও অনন্য নিদর্শন দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতী সেতু। সর্বোচ্চ টোল ৫৬৫ টাকা। রিকশা-ভ্যানে ৫ টাকা আর মোটরসাইকেলে ১০ টাকায় পার হওয়া যাবে সেতুটি। ঘাটের অপেক্ষার দিন তো শেষ। এই সেতু কেবল দুটি জেলার সংযোগ ভাবলে চলবে না, রাজধানীর সঙ্গে তৈরি হবে দশ জেলার নতুন পথ।
আরও পড়ুন: কালনা সেতু: ঢাকার সঙ্গে যশোর-খুলনার দূরত্ব কমবে ১২০ কিমি
নতুন সেই পথে নড়াইল থেকে ঢাকার দূরত্ব কমাবে ১০০ কিলোমিটার। তবে সব থেকে বড় ভূমিকা রাখবে যশোর অঞ্চলের। বিশেষ করে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমাবে ১২০ কিলোমিটার। বাড়বে বাণিজ্য সুবিধাও।
দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় থাকা এ অঞ্চলের মানুষ তাই এখন দেখছে নতুন স্বপ্ন। তারা বলছেন, কেন্দ্রের সঙ্গে এই ব্রিজ তৈরি করবে নতুন সংযোগ।
পাশাপাশি নির্মাণেও মুনশিয়ানা আছে এ সেতুতে। কপার ড্যাম টেকনোলজিতে তৈরি এ সেতুটি নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা), এটির মডেল তৈরির এমন নান্দনিকতা এ দেশে প্রথম। এ সেতুর স্থায়িত্ব ১০০ বছর ধরা হয়েছে।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, এ সেতুর স্থায়িত্ব ১০০ বছর ধরা হয়েছে, এর মধ্যে কিছু হবে না। মধুমতী সেতুতে ৮৪টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুর দুই পাশে ৪০টি এবং বাকিগুলো টোল এলাকায়। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বিবেচনায় রেখে ল্যাম্পপোস্টগুলো সৌরশক্তির করা হয়েছে। ফলে সন্ধ্যা হলে বিদ্যুৎ ছাড়াই অটোমেটিক জ্বলে উঠছে ল্যাম্পপোস্টগুলো। এতে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে। তবে এত দিন কালনা পয়েন্টে মধুমতী নদী ধারা বিছিন্ন ছিল। সেতু নির্মাণের ফলে সেই বিছিন্নতা আর রইল না। কালনা সেতু চালু হলে শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ভারত, কলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এরই মধ্যে নির্ধারণ হয়েছে সেতুর টোল। ভারী মালবাহী যান সর্বোচ্চ ৫৬৫ টাকা, বড় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২২৫, বড় বাস ২০৫ টাকা, ছোট ট্রাক ১৭০ টাকা, মিনিবাস ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস ৯০ আর প্রাইভেট কার ৫৫ টাকা। এ ছাড়া সাইড লেনে মোটরসাইকেল পারাপারে ১০ টাকা আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা ২৫ আর ভ্যান রিকশা পারাপারে লাগবে ৫ টাকা।
দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা তথা ‘মধুমতী সেতু’র দ্বার সোমবার (১০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে । এতে আনন্দিত নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষ। মধুমতী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রতিও পূরণ হবে। আর আজ দিবাগত রাত ১২টায় খুলে দেয়া হবে বহুল প্রতীক্ষিত মধুমতী সেতু।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতী সেতু নির্মিত হয়েছে। সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নড়াইলের কালনাঘাট এবং পূর্ব প্রান্তে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে।
]]>




