রানির অভিষেক অনুষ্ঠানে লন্ডন যেভাবে মেতে উঠেছিল উৎসবে
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩ সালের ২ জুন। সেদিন উৎসবে মেতে উঠেছিল লন্ডনের সব মানুষ। পুরো কমনওয়েলথ জুড়ে সেদিন উৎসবের আমেজ ছিল।
অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য রানি তার লন্ডনের ঠিকানা বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে সোনায় মোড়ানো শকটে বের হয়েছিলেন। এরপর তিনি যান ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে যেখানে তাকে মুকুট পরানোর মাধ্যমে তার অভিষেক সম্পন্ন হয়েছিল। তার সাথে সহচর হিসেবে ছিলেন ৬ তরুণী। সেদিন পুরো শহর আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছিল। বাকিংহাম প্রাসাদকে সাজানো হয়েছিল অপরুপ সাজে।
এই ছয়জনের একজন ছিলেন লেডি অ্যান গ্লেনকোনের, যিনি তখন পরিচিত ছিলেন লেডি অ্যান কুক নামে। তাদের দায়িত্ব ছিল দুটি। রানির দীর্ঘ পরিচ্ছদের ভেলভেটের শেষ প্রান্তভাগ ধরে রাখা এবং সেই সঙ্গে নিজেদেরকেও সুন্দর সাজে ফুটিয়ে তোলা।
সে সময় রানি এলিজাবেথের বয়স ছিল ২৬ বছর। তিনি চেয়েছিলেন তার অভিষেকের অনুষ্ঠানটি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হোক। সে সময় এ অনুষ্ঠানটি ছিল টেলিভিশনে সম্প্রচারিত প্রথম রাজ্যভিষেকের অনুষ্ঠান।
সেদিন অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। শুধু প্রাসাদের সামনে নয়, যে পথ ধরে রানি যাবেন, তার দুপাশেই ছিল উৎসাহী মানুষের ভিড়। শুধু মানুষ নয় সেদিন সব গণমাধ্যম জড়ো হয়েছিলেন এ অনুষ্ঠানের খবর প্রচারের জন্য। জানা যায়, সেদিন এতো মানুষ লন্ডনে উপস্থিত হয়েছিল যে তাদের পথের পাশেও থাকার জায়গা হচ্ছিল না।
আরও পড়ুন: ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর নেই
১৯৫৩ সালের ২ জুন রাতে প্রচুর বৃষ্টি নিয়ে বহু মানুষ রাস্তার পাশে অভিষেক অনুষ্ঠান দেখার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন। অনেকে রাতে বৃষ্টির মধ্যে সেখানেই ঘুমিয়েছিলেন।
সোনায় মোড়ানো শকটে করে রানি ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবের দিকে যাত্রা করেছিলেন। সেটির অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে ছিলেন লন্ডনের বহু মানুষ। বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে বের হয়ে অ্যাডমিরালটি আর্চের নীচ দিয়ে যখন রানির শকট এগিয়ে যাচ্ছিল সেসময় হর্ষ-ধ্বনি দিয়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছিল উপস্থিত মানুষ।
সেদিনের শোভাযাত্রায় রানির আরেক সহচরী ছিলেন লেডি জেইন ভেইন টেম্পেস্ট স্টুয়ার্ট। তিনি যে গাড়িতে ছিলেন, সেটিতেই ছিল প্রিভি পার্স নামে পরিচিত গোপন রাজকীয় থলি, আর সেই থলি যার কাছে থাকে, তিনিও একই গাড়ির আরোহী। ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ রাজথলি কেবল অভিষেক অনুষ্ঠানের সময়েই বাইরে আনা হয়।
রানিকে বহনকারী রাজকীয় শকটি ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে পৌঁছালে রানির ছয় সহচরী তার সাথে এসে অবস্থান নেয়। তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী তারা রানি যখন ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবির দিকে হেঁটে যাবেন, তখন তার ভারী পোশাকের দীর্ঘ শেষ প্রান্তটি তাদের ধরে রাখতে হবে, এবং একসঙ্গে হেঁটে যেতে হবে।
সেদিন আড়াইশো জনের বিশাল এক শোভাযাত্রা ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবের দিকে যাত্রা করে। রানির পাশে ডিউক অব এডিনবরা ছিলেন। ভেতরে উপস্থিত ছিলেন সারা বিশ্ব থেকে আসা ৮ হাজার অতিথি।
আরও পড়ুন: যে নামে পরিচিত হবেন নতুন ব্রিটিশ রাজা
অভিষেক অনুষ্ঠানে রানির পরনের যে পোশাক সেটি খুলে ফেলা হয়। খুলে নেয়া হয় সব অলংকার। তাকে পরানো হয় একেবারেই একটি সাদা রঙের সাদামাটা পোশাক।
এরপর ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবের ডিন পবিত্র তেলের একটি পাত্র নিয়ে আসলেন আর্চবিশপের কাছে। এরপর আর্চবিশপ রানিকে তেল মাখিয়ে অভিষিক্ত করার জন্য চলে গেলেন সামিয়ানার নীচে সবার আড়ালে। রানির কপালে তেল মাখিয়ে তাঁকে অভিষিক্ত করা হয়।
অভিষেক শেষে রানিকে নিয়ে রাজকীয় বহর আবার লন্ডনের রাস্তা ধরে বাকিংহাম প্রাসাদের দিকে এগিয়ে যায়। যখন তার গাড়ি আবার বাকিংহাম প্রাসাদে ফিরে এলো, সেখান থেকেও সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছিল সেই দৃশ্য।
প্রাসাদে ফেরার পর রানিকে তার পারিবারিক কাজে আবার মনোযোগী হন। অভিষেক থেকে ফিরে তিনি ফিরে গেলেন তার ছোট্ট দুই সন্তান চার্লস আর অ্যানের কাছে।




