খেলা

রেপো সুদহার বাড়ালেই কি কমবে মূল্যস্ফীতি?

<![CDATA[

আবারও রেপো সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেপো সুদহার ২৫ বেসিসি পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫০ থেকে ৫ দশমিক ৭৫ করা হয়েছে। সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সাধারণত অন্য ব্যাংকগুলো নিজেদের টাকায় টান পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়ে থাকে, তার সুদকে বলা হয় রেপো সুদ। চলতি বছর এ নিয়ে তিনবার রেপো সুদহার বাড়ানো হয়েছে।

 

চলতি বছরের ২৯ মে সুদের হার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছিল। পরে ৩০ জুন এ সুদের হার আবার বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে আনা হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রেপো সুদের হার আরেক দফা বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। রোববার (২ অক্টোবর) থেকে নতুন এ সুদের হার কার্যকর হবে।
 

সুদের হার বাড়ানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শক্তিশালী হলেও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় সৃষ্ট সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে বিশ্বে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অসামঞ্জস্য এখনো বিদ্যমান। এর ফলে ২০২১ সালের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে, যা এখনো পূর্বাবস্থায় ফেরেনি। এ জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ওভার নাইট বা এক দিনের জন্য ধার করা টাকা বা রেপোর সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি থেকে বোঝা যাচ্ছে, বাজার সামাল দিতেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি কতটা সামাল দিতে পারবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।
 

এ ব্যাপারে বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময় সংবাদকে বলেন, ‘এটি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে ফল দীর্ঘ মেয়াদে কতটা ইতিবাচক হবে, তা বলা যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর রেপো সুদের হার বাড়িয়ে দিলে আর ওদিকে সাধারণ ঋণে সুদের হার ৯ শতাংশই রাখলে, ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আরও সতর্কতা অবলম্বন করবে। ব্যাংক যখন ঋণ কম দেবে, বাজারে তখন টাকার প্রবাহটাও কমে আসবে। এতে সরবরাহ কম হলে মানুষ কম দ্রব্য কিনবে। মানুষের চাহিদা কমে এলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।’

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা কতটা কাজে দেবে–এমন প্রশ্নের উত্তরে এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘সুদহার বাড়ালে তাৎক্ষণিক একটা প্রভাব পড়ে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে জোর করে মূল্যস্ফীতি কমাতে গেলে অবস্থা হিতে বিপরীত হতে পারে। যেহেতু এটা রেপো সুদ, আর দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, আমার মনে হয় না আহামরি কোনো পরিবর্তন আসবে বাজারে।’

আরও পড়ুন: ‘এক বাজারে বেতনের আধেক শেষ’

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, টাকার প্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি সামাল দেয়া খুব একটা কার্যকরী পদক্ষেপ নয়। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান এম এম আকাশ সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের উল্টো দিকটাও ভাবা উচিত। ব্যাংক ঋণের তহবিলের ওপর সুদহার বাড়িয়ে দিলে ব্যাংক সাধারণ ঋণে সুদহার বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চাপ দিতে পারে, যা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য বাড়তি চাপ হবে। আর যদি সাধারণ সুদের হার না-ও বাড়ে, ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়া কমিয়ে দেবে। ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা না থাকলে উৎপাদন কম হবে, আর উৎপাদন কমে এলে সরবরাহ সংকটে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যাবে।’
 

এম এম আকাশ বলেন, সুহহার বাড়ালে ক্রেডিটের (টাকা) চাহিদা কমে আসবে–এ কথা সত্যি, কিন্তু কমোডিটির (পণ্য) চাহিদা কিন্তু কমছে না। এতে যে উদ্দেশ্যে এ সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে, সেটা কিন্তু কাজে আসছে না। আমাদের মূল্যস্ফীতি নির্ভর করছে সরবরাহ ও চাহিদার ওপর। সুদের হার বাড়লে পণ্য চাহিদা কমবে–এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখানে মূল হচ্ছে, সরবরাহের দিকটা খেয়াল রেখে পণ্যের দাম কমিয়ে আনা।’
 

চাহিদা কমিয়ে আনলেই মূল্যস্ফীতি কমে আসবে কি না–এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের মূল্যস্ফীতি চাহিদাজনিত নয়, এটি সরবরাহজনিত। সে ক্ষেত্রে সরবরাহ ঠিক থাকলে, বাজার মনিটরিং ও বাজার পলিসি ঠিক থাকলে ভালো কিছু আশা করা যায়। কিন্তু সুদের হার বাড়িয়ে যদি ভাবা হয়, মূল্যস্ফীতি কমে যাবে সেটা ভুল।’
 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও একটু সময় নেয়া দরকার ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে বড় সমস্যা–এরা হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাংককে আরও গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে। এ ছাড়া আমরা অনেকেই মনে করি মূল্যস্ফীতি কমানোর দায়িত্ব পুরোটাই ব্যাংকের হাতে। এমন কিন্তু নয়। পণ্য বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো এখতিয়ার নেই। সেদিকটা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে সামাল দিতে হবে।’

 

সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া আমানতের ৬ শতাংশ ও ঋণের ৯ শতাংশ সুদের ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের এ নয়-ছয়ের ফাঁদ থেকে বের হতে হবে। যে লোকটা ব্যাংকে টাকা রাখছে তার জন্য ৬ শতাংশ সুদ রীতিমতো অবিচার। আবার বড় বড় ব্যাবসায়ীর জন্য ৯ শতাংশ সুদ রীতিমতো বড় রকমের সুবিধা দেয়া। এতে ঋণের টাকা অনুৎপাদশীল জায়গায় ব্যবহারের ঝুঁকি থাকে। আর রেপো সুদ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি বাজারে আহামরি কোনো পরিবর্তন আনবে বলে আমার মনে হয় না।’

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!