বিনোদন

লীগ-দল: ছাত্রসবুজ এজেন্ডা জরুরি

<![CDATA[

হালে ছাত্রলীগ, আগে ছাত্রদলের যেসব কাণ্ডকীর্তিতে ক্ষমতাসীন দলটির বদনামের জন্য ছাত্রসংগঠন দুটোই দায়ী? এসব সংগঠনের ছেলে-মেয়েগুলো খুব জঘন্য? নিন্দনীয় হয়েই তারা জন্মেছে দুনিয়াতে? তাদের জাত-গোষ্ঠী, মা-বাবারাও খারাপ? এরা মেধা-যোগ্যতা ছাড়াই ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট, ইডেনসহ বিভিন্ন নামকরা বিদ্যাপিঠে? –মোটেই না।

তাহলে কেন গুণ্ডা-পাণ্ডা, পতিতার মতো বিশেষায়িত শব্দ জুটছে এই সন্তানদের নামের সঙ্গে? কোন অপরাধে কুসন্তানের জন্মদাতা বলে গালি শুনতে হচ্ছে মা-বাবাদের? কারা এই অঘটন পটিয়সী? মেধাবী সন্তানদের ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বানানোর হোতা কারা? -এতো প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের একটি উক্তি হাওলাত করতে হয়। গল্পের মতো উপমা দিয়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস লিখেছেন: এক কৃষক বাজারে পাট বেচতে গিয়ে ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পাট মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরে বউকে বলে পানি দিতে। বউ পানি দিতে একটু দেরি করে। এতে কৃষক রেগে বউকে চড় মারে। এ চড়ের সাথে বিশ্বব্যাংক ও সরকারের নীতিরও সম্পর্ক আছে, এটা না বুঝে যে শুধুই পুরুষতন্ত্র বোঝে তার আসলে এ যুগে সাহিত্য করার দরকার নেই।

 

 

আজকের বাস্তবতায় শিক্ষার্থী তথা তরুণ সমাজকে নষ্টের গোড়ায় কে বা কারা?- এ প্রশ্নের নিস্পত্তিতে যাওয়া কঠিন। মুখস্থভাবে দায়ী করা হয় ছাত্ররাজনীতিকে। এ দায় চাপানো বা দোষী সাব্যস্ত করা কতোটা যৌক্তিক?- এ প্রশ্নও আপেক্ষিক। এখানে দোষটা ছাত্রের না রাজনীতির? প্রাথমিক, মাধ্যমিকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করে উচ্চশিক্ষার গণ্ডিতে আসা শিক্ষার্থীদের কারা নষ্ট করে, ছাত্ররাজনীতির নামে কারা তাদের সর্বনাশ করে? –এ প্রশ্ন উহ্যই থেকে যায়। এ প্রশ্নকে বেশিদূর বাড়তেও দেয়া হয় না। কথিত ছাত্ররাজনীতির নামে তারা মন্দকাজে যে শ্রম-ঘাম ঝরায়, মেধা নষ্ট করে তা ভালো কাজে খাটানো গেলে দেশ এবং সমাজের চিত্রই পাল্টে যেতে পারতো। এ সংক্রান্ত উদাহরণ তালাশ করতে হবে না। আশপাশেই রয়েছে অনেক উদাহরণ। দরকার কেবল তা চোখ মেলে দেখার এবং উপলব্ধির।

 

মাত্র ক’দিন আগে, একদল শিক্ষার্থী জামালপুরের সরিষাবাড়িতে প্রকৃতি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিকর উদ্ভিদ পার্থেনিয়াম নির্মূল করে স্থানীয়ভাবে রেকর্ড তৈরি করেছে।  পার্থেনিয়াম নামের আগ্রাসী উদ্ভিদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সেখানকার মানুষ। উদ্ভিদটির সংস্পর্শ বা রেণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, জ্বর, এলার্জি, চর্মরোগ, ব্রংকাইটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগতে থাকে। নেতা, জননেতা, প্রশাসনের নানা জায়গায় ধর্ণা দিয়ে হয়রান হয়েছে তারা। কোথাও পাত্তা মিলছিল না। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা মিলে পার্থেনিয়ামকে নিমিষে বিনাশ করে দিয়েছে। সরকারের অনুগ্রহ-অনুকম্পার আশায় না থেকে রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় স্থানিয়দের যুথবদ্ধ করে পাহাড়ি কিছু শিক্ষার্থীর সেখানে একটি কলেজ দাঁড় করে ফেলাও তো তাজা ঘটনা।

 

আরও পড়ুন : কেন ঝুঁকি এ পূজায়ও?
 

উপজেলাটিতে কোনো কলেজ না থাকায় সেখানকার কেউ এসএসসি পাসের পর উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়তে চাইলে তাকে যেতে হতো রাঙামাটি জেলা শহরে। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা সম্ভব ছিল না বলে তাকে রাঙামাটিতেই থাকতে হতো। সেখানকার বেশির ভাগ মানুষের, বিশেষত পাহাড়ি মানুষের পক্ষে সন্তানকে জেলা শহরে রেখে পড়াশোনা করানোর আর্থিক সংগতি নেই। ফলে এসএসসি পাস করেও আর কলেজে যেতে পারেননি এমন তরুণের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় স্থানিয় শিক্ষার্থীরা মুরুব্বিদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ টিন দিয়ে একটি কলেজ তৈরির দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের কয়েকদিনের ভূমিকা নিজ চোখে না দেখলে বোধ-উপলব্ধিতে আসা কঠিন। ভর্তি পরীক্ষার সময় দূর-দূরান্ত থেকে নোয়াখালী যাওয়া পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের থাকা, খাওয়া, পরিবহন, চিকিৎসাসহ দেখভালে কিছু শিক্ষার্থীর তৎপরতা ভিন্নমাত্রার ঘটনা। স্থানীয় রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, প্রশাসনকেও শামিল হতে হচ্ছে এ অভিযাত্রায়। কার চেয়ে কে বেশি সেবা দেবে-এ প্রতিযোগিতাও প্রত্যক্ষ করার মতো।

 

বলা যেতে পারে এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু, পদক্ষেপ বিচারে মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। জামালপুরের সরিষাবাড়ি, নোয়াখালীর মাইজদি-সোনাপুর বা রাঙামাটির জুরাছড়ি বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো এলাকা নয়। ওই শিক্ষার্থীরাও বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়। তাদের সমর্থন ও সহায়তা দেয়া ব্যক্তিরাও তা নন। এখানে দরকার সদিচ্ছা ও উদ্যোগের। সরকারকে অজনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের এক শ্রেণির কর্মীর বিরাট ভূমিকাকে আড়াল না করে তাদেরকে ভালোকাজে লাগানোর মতো সক্ষমতা ও ব্যবস্থা অবশ্যই কাছে আছে। বছর দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন দরিদ্র কৃষকদের ধান কেটে দিতে। নির্দেশে কোনো গাফিলতি বা ঘাটতি ছিল না। এজেন্ডা না থাকায় কাজটি সুন্দরভাবে এগোয়নি। কোথাও কোথাও কৃষকের পাকা ধান কেটে বরবাদ করে দিয়েছে তারা। বরবাদ করার সক্ষমতা যাদের ছিল বা আছে সুখকর কাজের হিম্মতও নিশ্চয়ই তাদের রয়েছে। সেইক্ষেত্রে এজেন্ডা জরুরি। এজেন্ডা থাকলে নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের দিয়ে অবশ্যই সাফল্য আনা সম্ভব। সাফল্য আসতে বাধ্য। হলের সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, সাপ্লাই ব্যবসা, চাঁদাবাজির লাগামে টান পড়তে বাধ্য। সেইসঙ্গে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকেও এ রেসের সুযোগ দিলে আরো সাফল্য না এসে পারে না। বরং প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।  

আরও পড়ুন: ‘সুপার নিউজরুম’ এক উদীয়মান বাস্তবতা

 

আফসোসের বিষয় হচ্ছে, সে ধরনের আলামত নেই। আর তা না থাকায় ছাত্ররাজনীতির নাম শুনলে কেবল দুর্গন্ধ নয়, আতঙ্কিতও হয়ে পড়েন অনেকে। ছাত্ররাজনীতি বিষয়ে ছাত্রলীগের একটি কর্মতৎপরতার জেরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতরে কী অবস্থা যাচ্ছে তা হয় তো কারো কারো জানার বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ওই সব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও সেখানে ছাত্র রাজনীতি ঢুকতে না দিতে বুক পেতে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ছাত্রলীগ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে কমিটি করেছে মর্মে খবর প্রকাশের পটভূমিতেই এ অবস্থা। বাদবাকিটা আর বোঝার  অবশিষ্ট থাকে?

 

ক্যাম্পাসে সরকারি ছাত্র সংগঠনের লাঠিয়াল বাহিনীর তাণ্ডব নতুন নয়। যারা যখন ক্ষমতায় থাকে তারা একই কাজ করে। বিএনপির সময় যা করেছে ছাত্রদল। তাদের পেছনে ফেলে গত কয়েক বছরে ছাত্রলীগ আর মাত্রার মধ্যে নেই। এসবের সারসংক্ষেপ হচ্ছে মানুষের ঘৃণা। সেই ঘৃণাটা এখন আর ছাত্র বা ছাত্ররাজনীতিকে নয়, তাদের মা-বাবাসহ জাত-গোষ্ঠীকেও গাল শুনতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও উত্তরণে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্যোশাল ওয়ার্কে যুক্ত করার উদ্যোগ বেশির মধ্যে কম হলেও সাফল্য এনে দিতে পারে।  সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের গণমন্দ বলারও লাগাম টানাটা জরুরি। ‘আজকালকার ছেলেমেয়েদের দিয়ে কিছু হবে না, এদের না আছে দেশপ্রেম, না আছে চিন্তার গভীরতা’- ধরনের সিদ্ধান্তে চলে যাওয়া কাম্য নয়। নানান প্রবাদ, তত্ত্ব ও বদ্ধমূল ধারণা তাদের অগ্রাহ্যই করতে হবে? শৃঙ্খলে আনার চেষ্টাও করতে নেই? তত্ত্ব বরাবরই ধূসর, জীবন কিন্তু বহমান এবং চির সবুজ। তাই অভিলাষি মনকে চন্দ্রে না হোক অন্তত জোস্নায় সামান্য ঠাঁই দেয়াও কি অসম্ভব?

 

 

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!