বিনোদন

সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে!

<![CDATA[

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটে। আগের নির্বাচনগুলোর ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

তারা একদিকে যেমন বিদেশিদের কাছে দেশের সরকারকে খাটো করার প্রয়াসে প্রপাগণ্ডা ছড়াচ্ছে, ঠিক তেমনি রাজনীতির মাঠ গরম করবার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিত্তিহীন তথ্য প্রকাশ করে জনগণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সাথে সুশীল সমাজের একটি অংশ, আমলাতন্ত্রের একটি অংশ এবং অন্যান্য অনুঘটক নির্বাচনকে প্রভাবিত করবার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করতে ব্যস্ত রয়েছে। এটি এখন অনেকটাই “ওপেন সিক্রেট (উন্মুক্ত সত্য)” হিসেবে জনগণের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। সরকার যেমন বিষয়টিকে কড়া নজরদারিতে রেখেছে, ঠিক তেমনিভাবে যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তারাও চেষ্টা করে যাচ্ছে পর্দার অন্তরাল থেকে কিভাবে সরকারকে বিপদে ফেলে আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া যায় তার কৌশল নির্ধারণ করতে।

অতিসম্প্রতি একজন সচিব এবং ৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি চায়ের টেবিলেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ে। একটি গোষ্ঠী এই সকল কর্মকর্তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য প্রদান করছে। এ কথা ঠিক যে একজন কর্মকর্তাকে তার চাকরির মেয়াদ পূর্তির আগে যদি অবসরে পাঠানো হয় সেটি মানবিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য হয় না।  তবে,এই বিষয় নিয়ে তর্ক থাকতেই পারে।

পাশাপাশি এটিও ঠিক যে সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে যখন সরকার পদোন্নতি প্রদান করে তখন অনেক হিসাব-নিকাশ করেই তাকে পদোন্নতি প্রদান করে। সেই কর্মকর্তাকে যখন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সেটিও সরকারের পক্ষে বাধ্য হয়েই করতে হয়। সাধারণত এ ধরনের ঘটনা খুব বেশি ঘটতে দেখা যায় না। পত্র পত্রিকায়  এই ঘটনার বিভিন্ন ধরনের কারণের কথা আলোচিত হয়েছে। তবে, পর্দার অন্তরালে প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছে সেটি জানা সাধারণ জনগণের  জন্য অত্যন্ত দুরূহ কাজ। যদিও সরকারি চাকরি বিধির  আওতায় সরকার চাইলে ২৫ বছর পূর্ণ হলে যে কাউকে অবসরে পাঠাতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এই ঘটনার পেছনে এমন কোন ঘটনা রয়েছে যা সরকারকে বাধ্য করেছে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে। একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে সেই সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও।

যে কোন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের কাজ হচ্ছে সরকারকে নীতি প্রণয়নে সহায়তা করা এবং প্রণীত নীতির বাস্তবায়ন করা। এ কথা ঠিক যে বাংলাদেশের বাস্তবতায় অনেক ক্ষেত্রেই আমলাতন্ত্র তাদের ক্ষমতার তাত্ত্বিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে নীতি প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করবার চেষ্টা করে। তবে, তারা কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছে, তা অনেকটাই নির্ভর করে রাজনীতিবিদদের সক্ষমতার উপর। এ কথা অস্বীকার করবার উপায় নেই যে আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান,কারণ তাদের মাধ্যমেই সরকারের সকল নীতি বাস্তবায়িত হয় এবং নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে যে সমস্ত তথ্য ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন হয় তারাই সেগুলো  সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে প্রেরণ করে।

সেই দিক থেকে বিচার করলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে রাষ্ট্রের উৎপত্তির পর থেকেই। তবে, এ কথা ঠিক যে একটি গোষ্ঠী সব সময় আমলাতন্ত্রের কার্যক্রমকে সমালোচনা করে চলেছে। অনেক ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের কিছু কর্মকর্তার অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড সেই সমালোচনাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই মাঠ পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের পর্যন্ত কিছু কর্মকর্তার অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক যে আমলাতন্ত্রের দক্ষতার উপর সরকারের সফলতা নির্ভর করে কারণ সরকার যে সকল নীতি প্রণয়ন করে সেই নীতির বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে আমলাদের উপর।

বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণ নতুন কোন বিষয় নয়। সকল রাজনৈতিক দল যখনই ক্ষমতায় এসেছে একদল আমলাকে নিজেদের মনে করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছে। তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়টির অস্তিত্ব বিভিন্ন দেশে দেখতে পাওয়া যায়।  আমলাদের নিয়োগের বিষয়টি মূলত মেধা এবং স্পয়েল সিস্টেমের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকেই তাহলে দেখবো যে সেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরেই সেই দলের এবং রাষ্ট্রপতির পছন্দের অনেক মানুষকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। মূল বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রপতি যাদের উপর আস্থা রাখতে পারবেন তাদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ প্রদান করবেন। এটা করা হয় রাষ্ট্রপতির লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে সহায়তার করার জন্য।  ফলে, এদিক থেকে বিচার করলে পছন্দের ব্যক্তিদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পদায়নের মধ্যে কোন অন্যায় আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যদি সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হয় সেটি আমলাতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্যের পরিপন্থী কাজ হবে।

যেহেতু শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বিশ্বব্যাপী, ফলে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে তারা এই আমলাতন্ত্রকে বিভিন্নভাবে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিংবা একটি গোষ্ঠী চেষ্টা করছে কিভাবে সরকারের মধ্যে থাকা কিছু ব্যক্তিকে ব্যবহার করে সরকারের বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নিয়ে সরকারকে বিপদে ফেলা যায়। আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে “উত্তরা ষড়যন্ত্রের” মঞ্চায়ন দেখেছি। তখন বেশ কিছু অবসরপ্রাপ্ত এবং চাকরিরত কর্মকর্তা একটি বৈঠকে বসে কিভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা যায় তার পরকল্পনা করেছিল। অতএব নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র হবে-এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই সরকারকে সামনের দিনগুলোতে এগোতে হবে।

আর সেই দিক থেকে বিচার করলে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে সরকারের কাছে এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল বলেই হয়ত এই চার জন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকান্তর আরও কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে যা নির্দেশ করে যে, আরও কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে একটি গোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে এবং যাদের মাধ্যমে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এই মর্মে পত্রিকায় খবর প্রচারিত হয়েছে। ফলে সামনের এক বছর বাংলাদেশ সরকার এবং আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে কোন দল পরবর্তী ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে।

রাজনীতির মাঠে সকল রাজনৈতিক দল চেষ্টা করবে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকারকে বিপদে ফেলে জনগণের মন জয় করে নির্বাচন জিততে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে,  নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রচারের মাধ্যমে সরকার এবং রাষ্ট্রকে দেশ এবং জাতির সামনে ছোট করবার পরিকল্পনা রাজনীতিতে কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হলেও নৈতিকতার দিক থেকে এই বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক পরিবেশ যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের কৌশল গ্রহণ করে জনগণকে তাদের পক্ষে নিয়ে আসবার জন্য চেষ্টা করে চলেছে।

গত ১০ বছরে তারা দুর্বল ছিল বলে তাদেরকে দুর্বল ভাবার কোন অবকাশ নেই, কারণ এদের সাথে রয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একটি চক্র। ফলে, রাজনৈতিকভাবে যেমন তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে, ঠিক তেমনিভাবে সরকারের মধ্যে একটি গোষ্ঠী তাদের সাথে যোগসাজশ করে সরকারকে বিপদে ফেলতে চাইছে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে আছে অনাদিকাল থেকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে যেমন তার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন কিছু মানুষ জড়িত ছিল, ঠিক তেমনি ভাবে ১/১১ এর সময় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-নেত্রীরা শেখ হাসিনার বিরোধিতা করেছিলেন।

অনেকদিন যাবত দল ক্ষমতায় থাকার ফলে অন্য দলের নেতাকর্মীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে সরকারি দলে। এই অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার চেষ্টা করে চলেছে। ফলে, সময় এসেছে প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের চিহ্নিত করে তাদের উপরে আস্থা রাখার। আমি বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছেন। ফলে, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে তবেই গত প্রায় ১৪ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে। অতএব সময় এসেছে চোখ কান খুলে রেখে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার।

 

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!