বিনোদন

সমালোচকদের জবাব দেয়ার বিশ্বকাপ রোনালদোর

<![CDATA[

গত দেড় দশকে ফুটবল অনেক উত্থান-পতন দেখলেও ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে গেছেন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ও পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বছরের পর বছর ধরে আশ্চর্য ধারাবাহিকতা দেখিয়ে গেছেন এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবলার। কাতার বিশ্বকাপকেই দুজনের ক্যারিয়ারের শেষের শুরু বলা চলে। মেসির মতোই ব্যক্তিগত পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া রোনালদোরও এটাই শেষবারের মতো গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের মঞ্চে পা রাখা।

ফুটবল ইতিহাসের সেরাদের খুব সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও নিশ্চিতভাবে থাকবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। গত দেড় দশকে জাদুকরী ফুটবল উপহার দিয়ে জয় করে নিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের মন। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া তারকাদের একজন তিনি। গত দেড় দশকের ফুটবলে মেসির সঙ্গে অবিসংবাদিত সেরা তিনিই। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী এই তারকা ক্লাব পর্যায়ে সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেন। জাতীয় দলের হয়েও অর্জনটা কম নয়। 

আরও পড়ুন: কাতার বিশ্বকাপে যে বুট পরে খেলবেন মেসি 

জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ২০০৬ বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলা রোনালদো শেষবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন কাতারে। আগের চার বিশ্বকাপে তার সর্বোচ্চ সাফল্য বিশ্বকাপে চতুর্থ হওয়া। ২০০৬ বিশ্বকাপে স্বাগতিক জার্মানির কাছে হেরে চতুর্থ হয় লুইস ফিগো, রুই কস্তা, পলেতা ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল।

২০১০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পেছনে থেকে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে রাউন্ড অব সিক্সটিনে পা রাখে পর্তুগাল। সেখানে অবশ্য স্পেনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় রোনালদোর দল।

২০১৪ বিশ্বকাপে পর্তুগালের অংশগ্রহণ নিয়েই দেখা দিয়েছিল শঙ্কা। তবে প্লে-অফে জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচের সুইডেনকে একাই উড়িয়ে দেন রোনালদো। দলকে এনে দেন বিশ্বকাপের টিকিট। অবশ্য বিশ্বকাপটা পুরোপুরি ফিট অবস্থায় খেলতে পারেননি। ডেথ গ্রুপে জার্মানির বিপক্ষে ৪-০ গোলে উড়ে যাওয়া পর্তুগাল সেবার বাদ পড়ে গ্রুপপর্ব থেকেই।

রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত পরের বিশ্বকাপেই অবশ্য সেরা পারফরম্যান্সের দেখা পান রোনালদো। দল রাউন্ড অব সিক্সটিনে বাদ পড়লেও চার গোল করেন পর্তুগিজ যুবরাজ। তার মধ্যে প্রথম ম্যাচেই স্পেনের বিপক্ষে করেন দারুণ হ্যাটট্রিক।

কাতার বিশ্বকাপের টিকিটও অবশ্য খুব একটা সহজে পায়নি পর্তুগাল। বাছাই পর্বে নিজ গ্রুপে দ্বিতীয় হওয়ায় খেলতে হয়েছে প্লে-অফ। উত্তর মেসিডোনিয়ার বিপক্ষে প্লে-অফে জিতে কাতারের টিকিট পায় রোনালদোর দল।

আরও পড়ুন: দেশ থেকে ৯০০ কেজি মাংস নিয়ে কাতারে মেসিরা 

পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া রোনালদোর আন্তর্জাতিক শিরোপার আক্ষেপ মেটে ২০১৬ ইউরোতে। সে আসরের ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপা জেতে পর্তুগাল। পরবর্তী সময়ে উয়েফা নেশন্স লিগের প্রথম আসরেও শিরোপা জেতে তার দল। 

১৯৮৫ সালে পর্তুগালের ফুনচালের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম রোনালদোর। বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান রোনালদোর অবশ্য পৃথিবীর আলো দেখারই কথা ছিল না। তিনি যখন মায়ের গর্ভে তখনই দারিদ্র্যের কারণে গর্ভপাতের কথা ভাবছিলেন তার বাবা-মা। তবে ডাক্তারের আপত্তিতে পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ হয় তার।

১২ বছর বয়সে তিনি স্পোর্টিং সিপির একাডেমিতে যোগ দেন। ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়তে স্কুল ছেড়ে দেয়া রোনালদো ১৫ বছর বয়সে হৃদ্‌যন্ত্রের স্পন্দনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হলে শঙ্কা জাগে ফুটবল ছেড়ে দেয়ার। অবশ্য অস্ত্রোপচার করিয়ে ফের ফুটবলে ফেরেন তিনি।

২০০২-০৩ মৌসুমে রোনালদো স্পোর্টিং সিপির সিনিয়র দলে সুযোগ পান। প্রথম মৌসুমেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে নজর কাড়েন ইউরোপের পরাশক্তিদের।  

আর্সেনালে তার যোগ দেয়াটা যখন প্রায় নিশ্চিত, তখনই দৃশ্যপটে হাজির ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন। টিনএজার ফুটবলারের দলবদলের ইংলিশ রেকর্ড গড়ে ১৮ বছর বয়সী রোনালদোকে দলে ভেড়ায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

২০০৭-০৮ মৌসুমে রোনালদো ইউনাইটেডের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ডাবল জয় করেন। সে মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৪২ গোল করে প্রথমবারের মতো জেতেন ব্যালন ডি’অর। ক্লাবটির হয়ে ২৯২ ম্যাচে ১১৮ গোল করে ২০০৯ সালে ট্রান্সফার ফি’র বিশ্বরেকর্ড গড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন তিনি।

রিয়াল মাদ্রিদে এসে এই পর্তুগিজ পরিণত হন ভয়ংকর এক গোল স্কোরারে। মাদ্রিদের রাজকীয় দলটির হয়ে ম্যাচপ্রতি গড়ে একটির বেশি গোল করেছেন তিনি। ৯ বছরের ক্যারিয়ারে ৪৩৮ ম্যাচ খেলে তিনি করেন ৪৫০ গোল। এ সময় তিনি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৩১টি! রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ঘরোয়া লিগে যেমন সাফল্য পেয়েছেন, তেমনি ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় রিয়াল মাদ্রিদকে পরিণত করেছিলেন অপ্রতিরোধ্য এক দলে। পাঁচ বছরে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথে রোনালদো গোলের বন্যা বইয়ে দেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মাদ্রিদের হয়ে ১০১টি ম্যাচ খেলেই ১০৫টি গোল করেছেন তিনি। ক্লাবটির ইতিহাসে তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতা। 

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সফল নয়টি মৌসুম কাটিয়ে ২০১৮ সালে সিরি আ’র জায়ান্ট য়্যুভেন্তাসে যোগ দেন তিনি। ক্লাবটির হয়ে ৩ মৌসুমে ১৩৪টি ম্যাচ খেলে ১০১টি গোল করেন তিনি। 

২০২১ সালে ফের তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরেন। ২০০৩ সালের ২০ আগস্ট কাজাখস্তানের বিপক্ষে পর্তুগালের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। জাতীয় দলের জার্সিতে চারটি বিশ্বকাপ ও ৫টি ইউরো খেলেছেন সিআর সেভেন। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে তিনিই সর্বোচ্চ গোলের মালিক।

জাতীয় দলের জার্সিতে ১৯১টি ম্যাচ খেলা রোনালদো আন্তর্জাতিক ফুটবলে পুরুষ ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলের মালিক। ২০২১ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে জোড়া গোল করে তিনি ভেঙে দেন ইরানের আলি দাইয়ির ১০৯ গোলের রেকর্ড।

শুধু আন্তর্জাতিক ফুটবলেই নয়, পেশাদার ফুটবলের ইতিহাসে আনুষ্ঠানিক গোলের হিসাবে রোনালদোই সর্বোচ্চ গোলের মালিক। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৯ ম্যাচ খেলে ৮১৮ গোল করেছেন এই কিংবদন্তি।

আরও পড়ুন:  মেসিকে নিয়ে যা ভাবেন রোনালদো

একনজরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
নাম: ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দস স্যান্তোস অ্যাভেইরো
জন্ম: ফেব্রুয়ারি ৫, ১৯৮৫, ফুনচাল
ক্লাব: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
পজিশন: ফরোয়ার্ড
জাতীয় দলের জার্সি নম্বর: ৭
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: পঞ্চমবার (২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮, ২০২২) 

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!