সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতি : আপিল শুনানি ৬ নভেম্বর
<![CDATA[
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানির দিন পিছিয়ে আগামী ৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। রোববার (৩০ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সময় আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
গত ২৩ অক্টোবর সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের রায় লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারের আগে অনুমতির বিধান বাতিলের রায় প্রকাশ
গত ২৫ আগস্ট ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করেন হাইকোর্ট। আদালত তার পর্যাবেক্ষণে বলেন, ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এর ৪১(১) ধারা অনুসারে, সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতির বিধান বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থী ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এদিকে ৩ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতারের আগে অনুমতি নেয়ার বিধান বাতিলের রায় প্রকাশ করা হয়। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের স্বাক্ষরের পর ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৭ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
২০১৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয় ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে। সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধাসংক্রান্ত আইনের ৪১(১) ধারাটি সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) ধারাটি কেন সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেন হাইকোর্ট বিভাগ।
হাইকোর্টে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া, রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মণ্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
সরকারি চাকরি আইনে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি-সংক্রান্ত আইনের ৪১(১) ধারার ভাষ্য: ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে।’
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধান অনুসারে সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। সরকারি চাকরি আইনের ধারাটি বৈষম্যমূলক।
মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টের রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, আদালত রায়ে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮-এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থী, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছেন।
আদালত বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তারপরও ৪১ (১) ধারা করে সেখানে সরকারি কর্মচারীদের আলাদাভাবে একটি সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। তা কোনোভাবেই সংবিধানসম্মত নয়। এ আইন একটি মেলাফাইড (অসৎ) উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষা দিতে এ আইনের ৪১(১) ধারা সংযোজন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে তাদের গ্রেফতারের আগে এখন আর অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই।
]]>