বিনোদন

সর্বোচ্চ গতির রেল নেটওয়ার্ক চীনে

<![CDATA[

গত শতকের ৭০-৮০ দশকে যে দেশের রেল সিস্টেম সবচেয়ে অনুন্নত ছিল, সেই চীন কয়েক বছরেই তাদের রেল নেটওয়ার্ক সারা দেশে জালের মতো ছড়িয়ে দিয়েছে। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে ঘণ্টায় প্রায় ৪০০ কিলোমিটার গতির হাই স্পিড রেলপথ তৈরি করেছে চীন, যে পথ দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়া যায়। চীন ছাড়া জাপানসহ ইউরোপ-আমেরিকার দেশেও রেলওয়ে আছে। কিন্তু এতটা আধুনিক রেল নেটওয়ার্ক অনেক দেশেই নেই! এমনকি রেলের কারণে এয়ারলাইন্স ব্যবসায়ও মন্দা চলছে দেশটিতে!

ইতিহাসের একটু পেছনে গেলে জানা যায়,  ১৯৬৯ সালে জাপান প্রথম সর্বোচ্চ গতির ট্রেন নিয়ে আসে। যে বুলেট ট্রেন ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে চলতো। এরপর যক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এ রকম দ্রুত গতির ট্রেন আনে।পরবর্তীতে জার্মানি, স্পেন, ইতালি, রাশিয়াতেও এমন ট্রেন তৈরি করা হয়। তবে এসব দেশের মাঝে একবারও চীনের নাম আসেনি । কারণ তখন চীনের রেল ব্যবস্থায় হাই স্পিডের ছোঁয়াও লাগেনি। কিন্তু দেরিতে হলেও চীন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। চীনে আর্থিক উন্নয়নের হাওয়া লাগে ২০০৮ সালে । সে বছর যখন তারা অলিম্পিক আয়োজনের সুযোগ পায়। ওই বছর দেশটি প্রথমবার দ্রুত গতির রেল চালু করে যা ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম। 

ওই  ট্রেনে করে অলিম্পিকের দর্শনার্থীরা রাজধানী বেইজিং থেকে দূরের শহর তিয়ানজিং পর্যন্ত ঘুরে দেখার সুযোগ পানে। সেই থেকেই জনপ্রিয় হয়ে গেল চীনের ট্রেন ভ্রমণ। এখন উচ্চগতির ট্রেনের মাধ্যমে অতবড় দেশেও মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ভ্রমণ করা যায়।  

বর্তমানে চীনের বেইজিং থেকে সাংহাই ১৩০০ কিলোমিটার রাস্তায় মাত্র চার ঘণ্টায় যাতায়াত করা যায়। এমনকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার মিটার ওপরে তিব্বতে বুলেট ট্রেনে করে যাওয়া যায় এবং সেই ট্রেনে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেনও থাকে!

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এতকিছু কিভাবে করেছে চীন? প্রথমেই আসে তাদের খরচ সাশ্রয়ের কথা। যেখানে ইউরোপে হাই স্পিড রেলে প্রতি কিলোমিটার খরচ ২৫ থেকে ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৬ মিলিয়ন ডলার, সেখানে চীনের খরচ ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গবেষকদের মতে সস্তা শ্রম, নিজেদের কাঁচামাল, নিজেদের শ্রম তাদের এই মিরাকলের অন্যতম কারণ। 

আরও পড়ুন: নারী জিন ‘উম দুয়াইস’ থাকেন যে গ্রামে!

এছাড়া হাই স্পিড রেললাইন নির্মাণে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়দের সরাতে একটুুও কুণ্ঠাবোধ করেনি চীন। প্রথমে ভালোভাবে বললেও পরবর্তীতে তাদের বাড়ির ঘেঁষেই নির্মাণকাজ শুরু করেছে যাতে তারা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়।

বিশ্বে দুই তৃতীয়াংশ সর্বোচ্চ গতির রেল নেটওয়ার্ক দখল করে রেখেছে চীন। ১২ থেকে ১৩ বছর আগে হাই স্পিড রেল নিয়ে আসা চীনের সামনে তখনও অন্য কোনো দেশ টিকতে পারেনি। আর এখন সামনের ১৫ বছরে সেই গতি দ্বিগুণ করার চেষ্টা করছে দেশটি। ২০৩৫ সালে ঘণ্টাপ্রতি ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়ার টার্গেট চীনের রেল সিস্টেমের। তখন  বেইজিং থেকে সাংহাই যেতে লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা । মূলত এই রেললাইন নিয়েই তাদের বিশাল কর্মযজ্ঞ, কারণ আধুনিক রেল ব্যবস্থাই তাদের অর্থনৈতিক শক্তির অন্যতম উৎস।

আরও পড়ুন : বুদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বে কততম?
 

জানা যায়, ২০১৯ সালে চীনের রেল সিস্টেম স্বাগত জানায় প্রায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ভিনদেশি ভ্রমণকারীকে। যেখানে ভারতে এখনও একটাও হাই স্পিড রেল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়নি। কার্বনের মিনিমাল খরচ, সেফটি ইস্যু, কম ভাড়া, দ্রুতগতি আর সহজলভ্যতা ইত্যাদি কারণে গত কয়েক বছরে ২০ শতাংশ পর্যটক বেড়েছে চীনে। তবে চীনের আকাশপথে যাত্রা কিন্তু এত সুগম না। মূলত রেলপথ তাদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হওয়ায় বিমানপথ বা বিমানের জন্য অবকাঠামো তৈরি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। তাই রেলপথই যাত্রীদের প্রথম ও শেষ ভরসা।  

কিন্তু এক্ষেত্রে চাহিদাও একটা ফ্যাক্টর। দেশের দীর্ঘ আয়তনের পাশাপাশি জনসংখ্যায়ও এগিয়ে আছে চীন। তাই এত মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণে, তাদের চলাচলে, চাকরি, ব্যবসা সবকিছুতেই দ্রুত যাতায়াতে ট্রেনের বিকল্প নেই। প্রতিবছর চীনে এই হাই স্পিড ট্রেনগুলোতে ২০০ কোটি যাত্রী যাতায়াত করে।  তাই সরকারও চীনের রেলপথ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে ইনভেস্টমেন্টে কার্পণ্য করে না।  

চীনের আর্থিকখাতে রেল সিস্টেমের কত প্রভাব তা বোঝা যায় তাদের ট্রাভেল বিজ্ঞাপন দেখলে। সেগুলোও দ্রুত গতির ট্রেন নিয়ে। এরই মধ্যে চীন সরকার তাদের নতুন সংযোজন ম্যাগনেটিক লেভিটেশনের বিষয়ে জানায়, যে ট্রেন ঘণ্টায় ৬০০ কিলোমিটার স্পিড অতিক্রমের ক্ষমতা রাখবে! গতির যে উচ্চতা অন্য কোনও দেশ ছুঁতে পারেনি, সহজে পারবেও না। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, সর্বোচ্চ গতির এই রেল নেটওয়ার্কের একচ্ছত্র আধিপত্য চীনের আছে, চীনেরই থাকবে।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!