সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার স্বপ্ন ছিল সাফজয়ী কৃষ্ণার
<![CDATA[
হিমালয়ের দেশ নেপালকে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। দেশের ফুটবলে নতুন জোয়ার আনা সেই জয়ে অনবদ্য ভূমিকা ছিল কৃষ্ণা রাণী সরকারের। সাফের ফাইনাল ম্যাচে দুই গোল করা এই ফুটবলারের ওঠে আসার গল্পেও আছে ভিন্নতা। ফ্রিল্যান্স গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে আলাপে সেসবই জানালেন এ ফুটবলার।
নিজের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করে দেশের জন্য কাজ করবেন। তবে বাবা বাসুদেব সরকারের স্বপ্ন ছিল মেয়ে হবে ডাক্তার। সেবা করবে দেশের মানুষের জন্য। সেনাবাহিনী কিংবা ডাক্তার সব বাদ দিয়ে কৃষ্ণা নাম লেখালেন ফুটবলে।
সেই অপ্রাপ্তির গল্পকে পেছনে ফেলে দুরন্তপনায় এগিয়ে চলছেন সাফজয়ী এ নারী ফুটবলার। টাঙ্গাইলের গোপালপুরের জন্ম নেয়া কৃষ্ণা রাণী সরকার শীতের আগমনী এক সকালে শোনালেন নিজের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির গল্প।
কৃষ্ণা বলেন, স্কুলের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমি ভালো করতাম। আগে জানতাম না মেয়েরা ফুটবল খেলে। একদিন স্যার আমাকে বলেন কৃষ্ণা তুমি ফুটবল খেলবা? স্যারের এক কথায় রাজি হয়ে যাই। যদিও প্রথমে বাসা থেকে খেলতে দিতে চায়নি। মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলবে, সামাজিক বিষয় চিন্তা করে পরিবার থেকে না করে দেয়। বাসায় বুঝিয়ে বলার পর খেলতে দেয়, তবে যখন উপজেলা পর্যায়ে খেলতে যাই তখনও বাধে বিপত্তি আসে। খেলাধুলা করলে পড়াশোনা নষ্ট হয়ে যাবে এটা চিন্তা করে আমাকে আটকিয়েও রাখে। তারপরও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতে গিয়েছি। মূলত বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে আমি জড়িয়ে যাই ফুটবলে।
ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার পর প্রতিবন্ধতা পেয়ে কখনও কী মনে হয়েছিল আমাকে দিয়ে বোধহয় হবে না, ফুটবল ছেড়ে দেই? এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণা বলেন, প্রতিবন্ধকতা সব কিছুতেই থাকে আমারও ছিল পারিবারিক, সামাজিক সব মিলিয়েই। তবে কখনও মনে হয়নি ফুটবল ছেড়ে দেই। কারণ আমার কাকা, বাবা ও আশপাশের অনেক মানুষই আমাকে সাপোর্ট দিতেন, অনুপ্রাণিত করতেন।
সাফ জয়ের পর মেয়েদের ফুটবল খেলার পরিবেশ নিয়ে কৃষ্ণা বলেন, আগে তো বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্যাররা বুঝাতো আপনার মেয়েকে ফুটবলে দেন, বা মেয়েদের ফুটবলে উৎসাহিত করতো। এখন দৃশ্যপট বদলে গেছে, আমরা সাফ জয়ের পর দেশের মানুষ আরও অনুপ্রাণিত হয়েছে, মেয়েদের ফুটবলের প্রতি দেশবাসীর আগ্রহ বেড়েছে, এখন নিজে থেকেই মেয়েরা ফুটবলে আসছে। অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের ফুটবলে আসতে সহযোগিতা করছে। পারিবারিক সাপোর্টই বেশি জরুরি, পারিবারিক সাপোর্ট পেলে প্রত্যেক মেয়েই দেশের জন্য, নিজ পরিবারের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে পারবে।
আরও পড়ুন: ছেলেরা যা পারেনি, মেয়েরা তা পেরেছে
ফুটবলের এত ব্যস্ততার মাঝেও পড়াশোনাটাও চালিয়ে নিচ্ছেন কৃষ্ণা। বলেন, আগে মনে হতো পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে হবে। আর এখন খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনা করি। পড়াশোনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিভিন্ন দেশে যাই, সবার সঙ্গে কথা বলতে হয়, পড়াশোনা তো চালিয়ে যেতেই হবে।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় নিয়ে বলেন, দেশের মানুষ যে দেশের ফুটবলকে কতটা ভালোবাসে, আমাদের কতটা ভালোবাসে সেটা বুঝেছি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর। দেশের মানুষের এমন সমর্থন আমাদের বিশ্বজয়ে আরও অনুপ্রাণিত করেছে। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাতে চাই দেশের গণমাধ্যমকে। তারা আমাদের ফলাও করে প্রচার করেছে বলেই দেশের প্রতিটি মানুষ জানতে পেরেছে।
কৃষ্ণা আরও বলেন, সবেমাত্র আমরা সাফ চ্যাম্পিয়ন। এখনও অনেক কিছুতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাকি। নিজের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে দলকে আরো ভালো জায়গাতে নিয়ে যেতে চাই।
সাফের প্রথম দিকের ম্যাচগুলোতে গোল পাননি, কোনো অপূর্ণতা ছিল কি না? সেটি কিভাবে কাটিয়ে তুলেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণা বলেন, গোল না পেয়ে হতাশ ছিলাম তবে ভেঙে পরিনি, আমার মনে হয়েছিল আমি তো এমন খেলি না, কেন এমন খেলছি! পরিবারের কথা ভাবলাম, দেশের কথা ভাবলাম, এরপর নিজের দুর্বল জায়গাগুলো শনাক্ত করে সেটা পূরণ করেছি। স্যাররা আমাকে অনুপ্রাণিত করতো। অতঃপর প্রাপ্তিটা আসে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সবসময় অনুপ্রেরণা দেন বলে জানালেন কৃষ্ণা। বলেন, সংবর্ধনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে কেমন আছি জিজ্ঞেস করেছেন, সামনে আরও ভালো খেলতে হবে এই কথা বলেছেন। আমাদের সবাইকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলেই ভালো লাগে। উনি আমাদের সবসময়ই অনুপ্রাণিত করেন।
]]>