স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৪টি দাবি জানালেন হেফাজত নেতারা
এরই মধ্যে সংগঠনের সদ্য সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ আটক হয়েছেন বেশ কয়েকজন হেফাজত নেতা। এমন বাস্তবতায় সরকারের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন হেফাজতের নেতারা।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক নাশকতার প্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৪ মে) রাতে হেফাজতে ইসলামের সাবেক মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদির নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
মঙ্গলবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে মন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে প্রবেশ করেন তারা। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে বের হন। বৈঠকে তারা হেফাজতের নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ৪ দফা দাবি মন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
হেফাজতের সাবেক মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীর বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো মন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন, আশ্বাস দিয়েছেন।’
১. হেফাজতের গণআন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া আলেম ও সাধারণ মানুষকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করা।
২. দেশব্যাপী গ্রেপ্তার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফলে পবিত্র রমজান মাসে ইবাদত বন্দেগি করতে না পেরে অজানা আতঙ্কে দিন পার করছে মানুষজন। গ্রেপ্তার আতঙ্ক ও হয়রানি থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া।
৩. ২০১৩ সালে হেফাজতের বিরুদ্ধে যে সব মামলা হয়েছিল, পূর্বের আলোচনা অনুযায়ী মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা।
৪. দ্রুত কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া।
জানা গেছে, বৈঠকের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীসহ হাটহাজারী মাদ্রাসার একটি প্রতিনিধি দলও বৈঠকে অংশ নেন।
সূত্র জানিয়েছে, হেফাজতের সহিংসতার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ঘিরে হেফাজত ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার বিষয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে নতুন করে অংশ নিয়েছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মজলিশে এদারির সদস্য মাওলানা ইয়াহিয়া ও মুফতি জসীমউদ্দিন। হেফাজত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীও বৈঠকে থাকার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি পরে ঢাকায় আসেননি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৯ এপ্রিল রাতে নুরুল ইসলাম জিহাদীসহ হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে গত মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, অন্তত ১৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়। এসব নাশকতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত এক ডজন হেফাজত নেতা গ্রেফতার রয়েছেন।
এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত।
সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ইতিমধ্যে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও নুরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।