খেলা

স্বাদে অতুলনীয় মানিকগঞ্জের ‘হাজারি গুড়’

<![CDATA[

মানিকগঞ্জের বিখ্যাত হাজারি গুড়। স্বাদ আর সুগন্ধে অতুলনীয় এ গুড় দেশের বাইরেও সমাদৃত। চারশো বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন হরিরামপুরের হাজারিসহ ২০ থেকে ২৫টি গাছি পরিবার। অনেকটা অবিশ্বাস্য এ গুড়ের দাম প্রতি কেজি দেড় হাজার টাকার বেশি।

ভোরের আলো ফোটার আগেই গাছিদের ব্যস্ততা। কোমরে গামছা আর বটি হাতে খেজুর গাছ থেকে তারা রস সংগ্রহ করেন।

আরও পড়ুন: আখের রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছিল গুড়!

সারি সারি মাটির পাত্রে রস সংগ্রহের পর নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। এরপরই শুরু হয় হাজারি গুড় তৈরির কারিশমা। প্রতি এক হাঁড়ি রসের জন্য আলাদা আলাদা জ্বাল দিতে হয়। রসের ঘনত্ব বেড়ে গেলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ফুটন্ত রস ছেকে ঢেলে দেয়া হয় একটি মাটির পাত্রে। এরপর ঘুটতে ঘুটতে বাদামি রং হলে তৈরি হয় সুস্বাদু হাজারি গুড়। পরে সিল দিয়ে তা প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয়। রস সংগ্রহ থেকে জাল দেয়া এরপর ঘুটাসহ প্রায় ২০ ঘণ্টা লাগে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে। তবে এ বছর উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়াসহ খেজুর গাছের সংখ্যা কমে আসায় বিপাকে পড়েছেন গাছিরা।

গাছিরা বলছেন, আমরা এখন চাহিদা মেটাতে পারি না। গাছের সংখ্যা কমে গেছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কাজ করে জিনিসের দামে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুষিয়ে উঠতে পারছি না।

আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে চিনি-চুন দিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি, ব্যবসায়ীকে জরিমানা

তিন থেকে চার মাস চলে এ কর্মযজ্ঞ। পরিবারের কাজ ও লেখাপড়ার পাশাপাশি এ কাজে সহযোগিতা করেন নারীসহ অন্য সদস্যরা।

গাছি পরিবারের সদস্যরা বলছেন, নিজেদের সংসারের কাজ সামাল দিয়ে ওনাদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। এ তিন চার মাস খুবই ব্যস্ত সময় যায় আমাদের। ছেলেপেলেরাও লেখাপড়া করার পাশাপাশি সহযোগিতা করছে।

স্বাদে ও ঘ্রাণে অতুলনীয় এই হাজারি গুড় কিনতে দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতারা প্রতিদিন ভিড় জমান মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ন্যূনতম দেড় হাজার টাকায়।

আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে রং-কেমিকেলে তৈরি হচ্ছে গুড়

গাছিরা জানায়, দাম যদিও বেশি, তবে এর যে প্রক্রিয়া ও যে পরিমাণ রস জালিয়ে বানাতে হয়, তাতে আমাদের খুব বেশি লাভ হয় না।

জেলার ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়ের গুণগত মান ধরে রাখতে ও নকল গুড় তৈরি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সহযোগিতা করছেন জনপ্রতিনিধিরাও।

স্থানীয় গোপীনাথপুর ইউপি সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ঐতিহ্যবাহী এ হাজারি গুড়ের গুনগত মান ধরে রাখতে ও নকল গুড় তৈরি বন্ধে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন। আমরা সব সময় মনিটরিং করি।

আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে কেমিকেল দিয়ে তৈরি দুধ আসছে ঢাকায়

কথিত আছে চারশো বছর আগে হরিরামপুরের ঝিটকা এলাকার এই হাজারি গুড়ের ঘ্রাণ ও স্বাদে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রথম রানি এলিজাবেথ। তারপর থেকেই এ গুড়ের নাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের বাইরে। হরিরামপুরের ঝিটকার ২৫টি পরিবারের ২০০ জন গাছি প্রতিদিন ২ হাজার গাছ থেকে ১১০ কেজি গুড় তৈরি করেন।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!