৪০০০ বছর আগের বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক সভ্যতা
<
ব্যাবিলনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্বের প্রথম আইনপ্রণেতার নাম। হাম্মুরাবির কোড নামে একটি শক্ত আইন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা হাম্মুরাবি। এই বিধানটি মাটির ট্যাবলেট এবং স্টিলস নামক পাথরের লম্বা স্তম্ভতে খোদাই করে রাখা হয়। ২৮২টি আইনের সমন্বয়ে গড়া হাম্মুরাবির কোড ছিল কঠোর এবং নির্দিষ্ট। হাম্মুরাবিকে বলা হয়ে থাকে ইতিহাসের প্রথম আইনপ্রণেতা। তারপর বিখ্যাত ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানের কথা তো সবারই জানা। এটি নির্মাণ করেছিলেন রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার। রানিকে পাহাড় এবং মাঠের সৌন্দর্য উপহার দিতেই এই বিখ্যাত শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগানটি তৈরি করা হয়।

প্রথমে নির্মাণ করা হয় বিশাল এক ভিত, যার আয়তন ছিল ৮০০ বর্গফুট। ভিত্তি স্থাপন করার পর মাটি থেকে এর উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ৮০ ফুট। এই ভিত্তির ওপরই নির্মিত হয়েছিল বিশ্বের বিস্ময়কর পুষ্পবাগানটি। ৪০০০ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছিল এই বাগান। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী। ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল সেই বাগানে। ৮০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে পানি ওঠানো হতো মোটা পেঁচানো নলের সাহায্যে। তবে ৫১৪ খ্রিষ্টাব্দে পার্শ্ববর্তী পারস্য রাজ্যের সঙ্গে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এই সুন্দর উদ্যানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: কীভাবে মানুষের অনুভূতি ও আচরণ সৃষ্টি হয়?
ব্যাবিলনের এই শূন্য উদ্যান প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের একটি। শুধু ভাস্কর্যে নয়, এই শহরটি ছিল বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, গণিতবিদ্যা, জোতির্বিদ্যা এবং সাহিত্যে অন্যদের থেকে সবচেয়ে এগিয়ে। ব্যাবিলয়নীয়রাই প্রথম চাকার আবিষ্কার করেন। এ ছাড়াও আধুনিক কৃষিকাজেরও আবিষ্কারক তারা। লাঙল, তির, সেচব্যাবস্থার আবিষ্কারক তারাই। তারাই প্রথম সভ্যতা যারা কিনা, জমির মাপ, ট্যাক্স-এর হিসাব এবং ব্যবসায় হিসাবের ব্যবস্থা চালু করে। তারা একটি সৌর ক্যালেন্ডারও আবিষ্কার করে। এবং এই ক্যালেন্ডারটি এখনও আশ্চর্যজনকভাবে নির্ভুল। বড় সংখ্যাকে প্রতীকে রূপান্তরের রীতি তাদেরই আবিষ্কার। তবে হাম্মুরাবির মৃত্যুর পর ব্যাবিলনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। তার সন্তানেরা ঠিকভাবে রাজ্য পরিচালনা করতে পারছিলেন না। তাদের তেমন দক্ষতাও ছিল না। সেই সুযোগই নেয় প্রতিবেশী কাসাইটরা। তারা ব্যাবিলন দখল করে নেয় এবং এর নাম রাখে করন্দুনিয়াশ।
আরও পড়ুন: কেন রেগে যায় মানুষ?
প্রায় ৪০০ বছর শাসন করে তারা। তারপর একে একে বিভিন্ন শাসকের হাতে চলে যায় ব্যাবিলন। কাসাইটদের হাত থেক ব্যাবিলনের দখল চলে যায় আসিরীয়ানদের হাতে। তারপর আসিরীয়ান সাম্রাজ্যের পতনের পর ক্যালডীয় রাজা নবোপোলাসার ব্যাবিলনের সিংহাসন গ্রহণ করেন। তার পুত্র, দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের আদেশেই তৈরি হয়েছিল ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান। এ সময়েই আবারও ব্যাবিলন তার জৌলুস ফিরে পায়। একে নাম দেয়া হয় নতুন ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য। তবে এরপর বারবার বিভিন্ন আক্রমণে এই শহর তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। পবিত্র কোরআন এবং বাইবেলেও এই শহরটির কথা বলা হয়েছে।
সূত্র: ব্রিটেনিকা-এনসাইক্লোপিডিয়া
]]>




