Feni (ফেনী)ফেনী সদর

একরাম হত্যার রায় কার্যকর নিয়ে প্রশ্ন পরিবারের !

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাথমিক ভাবে র‌্যাব ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ঢাকা মিরপুর থেকে কয়েক জন আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এরপরই হত্যার ক্রু বের হতে থাকে। গ্রেফতাকৃত আসামীদের মধ্যে ১৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন। গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন ওসি আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫০ জন আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনীর তৎকালিন জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৬ জন আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয় ও বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনার ও যুবলীগ নেতা জিয়াউল আলম মিষ্টারসহ ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

ফেনী জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ বলেন, মামলাটি বর্তমানে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানীর জন্য হাইকোটে রয়েছে। গত এক বছর কোভিড-১৯-এর কারণে এই মামলার আসামিদের আপিল শুনানি করা সম্ভব হয়নি। ফলে ডেথ রেফারেন্সও পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে রায় কার্যকরে বিলম্বিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পলাতক আসামীদের বেশির ভাগই বিদেশে পালিয়ে গেছে।

এখনও অধরা ১৬ আসামী


আদালত ও পুলিশ সূত্রে বলা হয়, মামলার ১৭ আসামী বর্তমানে অধরা। মামলার রায়ে যাদের মধ্যে ১৫ জনই ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত, বাকী ২ জন সাজাপ্রাপ্ত। এখনও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে তাদের মধ্যে রুটি সোহেল নামে অপর এক আসামী রায় ঘোষণার আগেই র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়।

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন জানান, একরাম হত্যা মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে। তবে পলাতক আসামীরা দেশে না বিদেশে রয়েছে এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই বলে জানান।

মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক ১৭ জন হলো- ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম আবিদ, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জি. রাসেল, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন আকরাম, শফিকুর রহমান ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মহিউদ্দিন আনিছ, বাবলু ও টিটু।

এদের মধ্যে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান জাহিদ চৌধুরী, এমরান হোসেন রাসেল, জাহেদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আবিদুল ইসলাম আবিদ, জিয়াউর রহমান বাপ্পি ও আরমান হোসেন কাউসার। আর গ্রেফতারই করা যায়নি ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, শফিকুর রহমান ময়না, একরাম হোসেন আকরাম, মহি উদ্দিন আনিছ, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, টিটু, বাবলু।

গত ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ এ মামলার ৩৯ আসামীর মৃত্যুদ-ের দেয় আদালত। সাজাপ্রাপ্ত ৫৫ আসামীর মধ্যে বিভিন্ন সময় পুলিশ ৪৫ জনকে গ্রেফতার করে। তবে এদের মধ্যেও জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছে আট আসামি। শুরু থেকেই ধরা যায় নি নয় আসামীকে।

কারাগারে রয়েছে ২২ জন


একরাম হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ২২ জন বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন হত্যার পরিকল্পনাকারী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাত, আবু বক্কার সিদ্দিক ওরফে বক্কর, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।

অন্যদিকে মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ১৬ জন। তারা হলেন- বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, একরামের একান্ত সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা ওরফে কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!