৫ মাস পর ছেলের মরদেহ বুঝে পেলেন বাবা
<![CDATA[
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পাঁচ মাস পর ছেলের মরদেহ বুঝে পেয়েছেন ফেনীর ফুলগাজীর নিহত ইয়াছিনের মা-বাবা। বুধবার (৯ নভেম্বর) বেলা দুপুর সোয়া একটার দিকে ডিপো কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত মো. ইয়াছিনের মরদেহ তার বাবা বদিউল আলমকে বুঝিয়ে দেন।
মো. ইয়াছিন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোর লরিচালক ছিলেন। বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থল থেকে সর্বপ্রথম তিনি তার ফেসবুক আইডি থেকে অগ্নিকাণ্ডের লাইভ প্রচার করেছিলেন। তার বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামে। চার বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে ইয়াছিন ছিলেন তৃতীয়।
গত ৫ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে ছেলে ইয়াছিনের কোনো সন্ধান পাচ্ছিল না পরিবার। ছেলেকে জীবিত বা মৃত পাওয়ার জন্য ঘটনার পরপরই সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলম। খুঁজেছেন বিভিন্ন হাসপাতালেও, কিন্তু কোথাও সন্ধান পাননি। তখন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনাও দিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ঘটনার ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন সন্ধান না পেয়ে হতাশ ছিলেন তারা। কিন্তু হাল ছাড়েননি তারা। অবশেষে মরদেহের খোঁজ পেয়ে মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন মা-বাবাসহ স্বজনরাও।
ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলম জানান, প্রায় ১০ বছর আগে বিএম কনটেইনার ডিপোতে গাড়ি চালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন ইয়াছিন। দুই বছর আগে পদোন্নতি পেয়ে ডিপোর লরিচালক হন। বিস্ফোরণের সময় ইয়াছিন ডিপোতেই ছিলেন।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে কারা দায়ী জানাল তদন্ত কমিটি
ইয়াছিনের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বিস্ফোরণের রাতে ডিপোতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ইয়াছিন। অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য তিনি মোবাইল ফোনে লাইভ দিয়েছিলেন। সেই লাইভ দেখে তিনি (ইউসুফ) তার কাছ থেকে অগ্নিকাণ্ডের খবর জানতে ফোন দিয়েছিলেন। তখন ইয়াছিন মুঠোফোনে বলেছিলেন, আগুনের ভয়াবহতা অনেক। আমার জন্য দোয়া করিস। এর কিছুক্ষণ পর তার লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। মুহূর্তেই মুঠোফোনের পর্দা অন্ধকার হয়ে যায়। এর পর থেকে ইয়াছিনের খোঁজ মিলছিল না।
ইয়াছিনের স্বজনরা জানান, চার থেকে পাঁচজন মিলে সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপো, চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে হন্যে হয়ে ইয়াছিনকে খুঁজেছেন। কিন্তু কোনো খোঁজ পাননি। তার খোঁজে চট্টগ্রামে গিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনাও দিয়ে এসেছিলেন।
আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড: আরও দুই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
অবশেষে নিখোঁজের পাঁচ মাস চার দিন পর ছেলের মরদেহ বুঝে পেয়েছে পরিবার। ডিএনএ পরীক্ষায় ইয়াছিনের মরদেহ শনাক্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ডিপোর কর্মকর্তারা ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলমকে ফোন করে ছেলের মরদেহ বুঝে নিতে বলেন। ফোন পেয়ে বুধবার ভোরে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে সীতাকুণ্ডে রওনা দেন। বেলা সোয়া একটায় ডিপো কর্তৃপক্ষ তার কাছে ছেলের মরদেহের কফিন বুঝিয়ে দেয়।
অনেক আগেই ছেলেকে জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন বাবা-মা। কয়েক দিন আগেও ছেলের খোঁজখবর নিতে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। তখন জানানো হয়, আরও কয়েকটি মরদেহ আছে। পরিচয় নিশ্চিত হলে জানানো হবে। তিনি বলেন, অন্তত নিজেদের হাতে ছেলের কবর হবে। এটাই এখন আমাদের জন্য অনেক বড় সান্ত্বনা।
]]>