বাংলাদেশ

শীতে ধুলাবালি থেকে ঢাকাবাসীকে বাঁচাবে কে?

<![CDATA[

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত পাভেল রহমানের (২৭) দিন শুরু হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় ভেসে বেড়ানো ধুলায় শ্বাস নিয়ে। মেট্রোরেলের কাজের কারণে সৃষ্ট ধুলায় মাস্ক পরেও কোনো নিস্তার নেই। এ রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন পাভেলের মতো অনেকেরই নাক-মুখ ঢেকে যেতে হয় অফিসে।

শুধু কারওয়ান বাজার এলাকাই নয়, দেশের অনেক জায়গাতেই রয়েছে এমন দুরবস্থা। রাজধানীতে এমন ধুলাবালি তথা বায়ু দূষণ সামাল দিতে সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের রয়েছে নানামুখী দায়বদ্ধতা। অথচ তাদের কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে পরিবেশ রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে।

সম্প্রতি পরিবেশ সংস্থাগুলোর জরিপে দেখা যায়, ঢাকার বাতাসে প্রতিদিন শ্বাস নিলে ২৬টি সিগারেট খাওয়ার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। এ থেকে এ কথা বলা বাহুল্য হবে না যে, ঢাকার বাসিন্দারা ধুলার শহরেই বাস করে আসছে বিগত কয়েক দশক ধরে।

ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান সময় সংবাদকে বলেন, ধুলাবালি থাকবে ও ধুলাবালি থেকে আমরা বাঁচবো এটা আসলে সমাধান না। ধুলাবালি যেন না হয় সে বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যাতে ধুলাবালি কমে বা একেবারে না থাকে সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। ধুলাবালি যেসব জায়গা থেকে আসে সেসব জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ যদি যথাযথভাবে না করা যায় তাহলে ধুলাবালি বাতাসে মিশে যাবে।

খেয়াল করলে দেখা যায়, অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতের সময় বাতাসে ধুলাবালি বেড়ে যায়। বায়ুর দুটি স্তর থাকে- শীতল ও উষ্ণ। শীতল স্তরের ঘনত্ব বেশি থাকে ফলে তা ভারি হয় তাই এটি নিচে থাকে এবং এটি ধুলাবালি আটকায়। শীতকালে ভেন্টিলেশন গরমকাল থেকে কম হয়। এই সময় যেহেতু ঘরের দরজা-জানালা প্রায়শই বন্ধ থাকে তাই বায়ু প্রবাহ ঠিকমতো হয় না যার কারণে ধুলাবালি যুক্ত বাতাসও বেশি স্থান পরিবর্তন করে না। অপরদিকে বায়ুর আর্দ্রতা কম থাকে বলে শীতল বায়ুর জলীয় বাষ্প শুকিয়ে যায়, তাই এর মধ্যে থাকা ধুলাবালি কণা তখন আর্দ্রতা হারিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা অনেক কম থাকায় বাতাস পরিবেশ থেকে পানি শোষণ করে। তাই পানির এসময় বাষ্পায়ন বেশি হয়। যেমন শীতকালে ভেজা কাপড় শুকাতে দিলে পানি তাড়াতাড়ি বাষ্পীভূত হয়ে কাপড়কে শুকিয়ে ফেলে। তো এভাবে বেশি বেশি পানি বাষ্পায়নের ফলে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায় এবং ধুলাবালি বৃদ্ধি পায়। তাই শীতকালে ধুলাবালি বেশি দেখা যায়।

এ ব্যাপারে শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ধুলাবালি যে শুধু শীতে বাড়ে তা কিন্তু নয়, ধুলাবালি বর্ষাকালেও থাকে। সেসময় ধুলাবালি বৃষ্টির কারণে  বৃষ্টির সাথে মিশে মাটিতে নেমে আসে। এজন্য আমরা এটা দেখতে পাই না বা উপলব্ধি করতে পারি না। কিন্তু শীতকালে যেহেতু বৃষ্টি হয় না তাই ধুলাবালি আমাদের বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং ভারি হয়ে যায় বাতাস। এতে করে আলো ঠিকমতো ঢুকতে পারে না। ধোঁয়াশার মতো সৃষ্টি হয়। শীতকালে খেয়াল করবেন সন্ধ্যা আগে নেমে আসে। এর কারণ বাতাসের ধুলা অর্থাৎ বায়ু দূষণ।

বর্তমান সময়ে বায়ু দূষণের প্রধানতম একটি কারণ ঢাকা শহরের চারপাশের নির্মাণাধীন নানা প্রকল্প। এছাড়া শিল্পকারখানা ও যানবাহন থেকেও নির্গত ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ হচ্ছে। আগের থেকে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ ও ধুলাবালির পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন মেহেদী আহসান।

সমাধান জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব জায়গা থেকে ধুলাবালি সৃষ্টি হচ্ছে সেসব জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এতে করেই ঢাকা শহর ধুলাবালি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। শহর যদি পর্যাপ্ত খোলামেলা থাকে, প্রচুর গাছপালা থাকে তাহলেও কিন্তু ধুলাবালি কমানো সম্ভব৷ আমরা যদি ১০-১৫ বছরের একটা প্ল্যান নিয়ে কাজ করে পরিবর্তনগুলো আনতে পদক্ষেপ নিই, সেভাবে কর্মসূচি নিয়ে তা বাস্তবায়ন করি তাহলে আমাদের পক্ষেও সম্ভব। পাশাপাশি জনগণের সম্পৃক্ততাও দরকার।

ধুলা রোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। সে কারণে ঢাকার বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকে। তবে যারা উন্নয়ন কাজ করছেন, তাদের চিঠি দিয়েছি। তাদের বলেছি, তারা যাতে এসব কিছু ঢেকে রাখে।  ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। গাড়ির ধোঁয়া, কালো ধোঁয়া বন্ধে আমরা চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা

পানি ছিটিয়ে ধুলা রোধের ব্যাপারে মেহেদী আহসান বলেন, এটি কার্যকরী কোনো উদ্যোগ না, এটি আসলে লোক দেখানো উদ্যোগ বলেই মনে করি। কেননা, মূল সমস্যা যদি সামগ্রিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া না হয় তাহলে লাভ নেই। আপনি প্রতিদিন ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা জায়গায় পানি ছিটালেন, কিন্তু ধুলা আসছে কোথা থেকে তা যদি না জানেন তাহলে তো সেই পানি ছিটানোতে ধুলা কমবে না। আপনি মূল জায়গার ধুলা না সরিয়ে এক জায়গায় পানি ছিটালে সেখানে কিছুক্ষণ পরে আবারও ধুলা জমবে। এটা কোনো কার্যকরী সমাধান না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের কারণে বছরে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এর আগেও বায়ুর মানের সূচকে বাংলাদেশ বিশেষত ঢাকা শহর কয়েক দফা সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে উঠে এসেছে।

এদিকে প্রতিদিনের ধুলাবালিতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, ভুগছেন নানা রকমের রোগ-ব্যাধিতে। যাদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের এরকম চুলকানি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শুরু থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হলে চুলকানি বা অ্যালার্জি ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান পঞ্চম। একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষিত বায়ুর কারণে ২০১৯ সালে রাজধানীতে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ডব্লিউএইচওর দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বায়ুদূষণে বিশ্বে প্রতিবছর ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এখন থেকেই সচেতন না হলে দৃশ্যমান এ ধুলাবালিই হতে পারে মৃত্যুসহ নানা রকমের শারীরিক জটিলতার প্রধান কারণ- এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!