বাংলাদেশ

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে যেভাবে বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের আদানি

<![CDATA[

গৌতম আদানি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী। ইলন মাস্ক ও জেফ বেজোসের পরেই আদানির অবস্থান। জীবনে প্রাণ হারানোর মতো অবস্থা থেকে ছোট-বড় কম ঝড়-ঝাপটা আসেনি আদানির জীবনে। কিন্তু সব সামলে আদানি এখন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে এক অনন্য রোল মডেল।

আদানিকে নিয়ে বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমটির ভারতীয় প্রতিনিধি সৌতিক বিশ্বাস তুলে ধরেন শীর্ষ এ ব্যবসায়ীর জীবনের পথচলার উঁচুনিচু নানা বাঁকের গল্প।

হোটেলে তাজমহলে হত্যাযজ্ঞ

সময়টা ছিল ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাত। তখন আদানি ভারতের শীর্ষ দশ ধনীদের একজন। নৈশভোজে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত তাজমহল হোটেলে ছিলেন আদানি ও তার সঙ্গীরা। সেদিন রাতেই তাজ হোটেলে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ৬০ ঘণ্টা জুড়ে চলে হোটেল ও শহর হত্যাযজ্ঞ, যাতে প্রাণ হারান ১৬৬ জন।

সে রাতে নেহাত কপাপের জোরেই বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন আদানি। পরবর্তীতে ভারতের ইন্ডিয়া টুডে ম্যাগাজিনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আদানি বলেন, হোটেলের স্টাফরা আমাদের বেজমেন্টে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে পরে হলরুমে নিয়ে আসা হয় আমাদের। বাইরে তখনও চলছিল ধ্বংসযজ্ঞ। হলরুমে আমরা প্রায় ১০০ জনের মতো ছিলাম। অনেকেই সোফার নিচে লুকিয়ে ছিল, অনেকে লুকিয়ে ছিল এখানে-সেখানে। সবাই তখন মৃত্যুভয়ে ভীত। আমি তাদের সাহস দিয়ে বললাম, ঈশ্বরের ওপরে বিশ্বাস রাখ। আমি বাসায় ফোন করলাম। বাইরে আমার ড্রাইভার ও নিরাপত্তা কর্মীরা আমার ফিরে আসার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিল।

আদানির এ বেঁচে যাওয়া এক রকমের নবজীবন লাভই বলা যায়। নতুন জীবন পেয়ে আদানি বলেছিলেন, আমার চোখের সামনে থেকে মাত্র ৫ মিটার দূরে গুলি করে মানুষ মারা হচ্ছিল। মৃত্যু কী তা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি।

অপহরণের শিকার

এটাই প্রথম না। ১৯৯৮ সালে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন এ ধনকুবের ও তার এক সহযোগী। কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদের। প্রাণে বেঁচে এলেও এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি আদানি। নিজের জীবনের লোমহর্ষক ঘটনাগুলোকে কয়েকটি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ঘটনা বলে এক রকমের উড়িয়ে দিয়েছেন গৌতম আদানি।

ভাগ্য অন্বষণে মুম্বাই

১৬ বছর বয়সে বিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরিয়ে ব্যবসায় ভাগ্য অন্বষণে মুম্বাই শহরে পাড়ি জমান আদানি। শুরু করেন হিরা ব্যবসা দিয়ে। কিন্তু দু’বছর ব্যবসা করে ঠিক সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না তিনি। পরে ফিরে আসেন নিজ শহর গুজরাটে। সেখানের এক প্যাকেজিং কারখানায় কাজ শুরু করেন এ ধনকুবের। একটি মধ্যবিত্ত কাপড় ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে আদানির ছিল ঝুঁকি নেয়ার মারাত্মক সাহস। গুজরাটে এসে আর পেছনে ফিরে তাকাননি আদানি। একে একে শুরু করেন বন্দর ব্যবসা, রেলওয়ের কাজ, অবকাঠামোগত ঠিকাদারি, খনি ব্যবসা ও আবাসন ব্যবসা। আদানিকে বলা হয় ভারতের নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে সাংঘাতিক ব্যবসায়ী, যে কি-না সব ধরনের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত।

ভারতের অবকাঠামো উন্নয়নে আদানি ও তার প্রতিষ্ঠান এখন সবার শীর্ষে। আদানির মালিকানায় আছে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট কোম্পানি, ১৩টি পোর্ট (যার মধ্যে ভারতের সর্ববৃহৎ বন্দর মুন্দ্রা অন্তর্ভুক্ত), ৭টি বিমানবন্দর। দিল্লি হয়ে মুম্বাইয়ে ভারতের সবচেয়ে বড় এক্সপ্রেসওয়ের কাজটিও এখন আদানির প্রতিষ্ঠানের হাতে।

জ্বালানিখাতে একচ্ছত্র আধিপত্য

এ ছাড়া ভারতের জ্বালানিখাতে আদানির রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। দেশটির ছয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আদানির মালিকানাধীন। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি গ্রিন হাইড্রোজেনে আদানি ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন ও তৈরি করেছেন ৮ হাজার কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন। কেবল দেশে নয়, ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি কয়লাখনি কিনে নিয়েছেন আদানি। বিশ্ব যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে সরগোল তুলছে সেখানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে আদানি পিছিয়ে যাচ্ছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাব মিলবে আদানির ভবিষ্যতের ভাবনা শুনলে। আদানির ইচ্ছা ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মালিকানার শীর্ষ স্থানটি দখল করা।

মোদির সঙ্গে দহরম-মহরম

তবে নানা আলোচনার সঙ্গে কম সমালোচনার জন্ম দেননি এ ধনকুবের। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দহরম-মহরম নিয়ে তাকে ও মোদিকে শুনতে হচ্ছে নানা কিছিমের বাঁকা মন্তব্য। অনেকেই বলছেন, পুঁজিবাদের ছায়ায় মাথা দিয়ে আছেন মোদি ও মোদির সাহায্যে দিনকে দিন ডালপালা বিছিয়ে নিজেকে ব্যবসার বটবৃক্ষে পরিণত করছেন আদানি।

সম্প্রতি রাজনৈতিক বিশ্লেষক জেমস ক্র্যাবট্রি তার এক বইয়ে লিখেছেন, ভারত যেখানে নিজের অবকাঠামো উন্নয়নে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আদানি গড়ে তুলছেন নিজ মালিকানাধীন রেলওয়ে ও জ্বালানি কোম্পানি। নিজেদের কয়লা তুলতে হিমশিম খাওয়া দেশটির নাগরিক আদানি কয়লাখনি কিনছেন দেশের বাইরে। নিজের বন্দর দিয়ে নিজেকেই নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

সেদিন মুম্বাইয়ের তাজ মহল হোটেল থেকে বেঁচে ফিরতে না পারলে চলতি বছর আদানির মৃত্যুর ১৪ বছর পূর্ণ হতো। তখন আদানিকে চিনতো গুটিকয়েক মানুষ। কিন্তু বেঁচে ফিরে আসা আদানি দেখিয়েছেন বেঁচে থাকার মাঝে সার্থকতা কোথায়।

ভারতের শীর্ষ ধনী

১৪ বছর পরে আদানি এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন। সাতটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আদানির অধীনে বর্তমানে চাকরি করছেন ২৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমানে আদানির সম্পত্তির পরিমাণ ২৩০ বিলিয়ন ডলার। একসময়ের এক চেটিয়া রাজত্ব করা আম্বানি পরিবারকে পেছনে ফেলে ভারতের শীর্ষ ধনী এখন গৌতম আদানি।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!