বিনোদন

টক অফ দ্য কান্ট্রি: ১০ ডিসেম্বর

<![CDATA[

এখন রাজনীতি সচেতন তো বটেই, রাজনীতির বাইরের অনেকের মুখে মুখে এটা ছড়িয়ে পড়েছে যে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘কিছু একটা’ হবে। ঢাকায় সেদিন আসলে কি হবে তা নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে না পারলেও ‘কিছু’ হবে বলে প্রচারটা বেশ বাজার পেয়েছে। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। বিএনপি কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে ১০টি বিভাগীয় সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশটি সবচেয়ে গুরুত্ব পায়। এর কারণ কী? কারণ তো কিছু নিশ্চয়ই আছে। কারণ হলো, বিএনপির শীর্ষ নেতারা না হলেও মধ্যম সারির কিছু নেতা ১০ ডিসেম্বরকে নিয়ে এমন সব গল্প ফেঁদেছেন, যা অনেকেই বিশ্বাস করেছেন এবং তা থেকেই ১০ ডিসেম্বর তিল থেকে তালে পরিণত হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে রাজশাহী পর্যন্ত বিএনপির ৯টি বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে। এই ৯ সমাবেশের কারণে কি সরকারের ঘুটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে? ওই সমাবেশগুলোতে কি এত বেশি মানুষের সমাগম হয়েছিল, যা দেখে মনে হয়, আওয়ামী লীগের দিন শেষ? এটা ঠিক, সবগুলো বিভাগীয় সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু কৌশলের আশ্রয় সরকার পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল। যেমন পরিবহন ধর্মঘট। সরকারের লোকজন বলছে, ওইসব ধর্মঘটের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের ব্যাপার। এই সাফাই বক্তব্য কারো কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। উল্টো এতে অনেকের মধ্যে একটা জেদ চেপেছিল। বাধা ডিঙিয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়ার। 

তাই অনেকে কিছুটা পিকনিকের মুডে ২/৩ দিন আগেই সমাবেশস্থলে হাজির হয়েছে। একদিনের একবেলার সমাবেশ তিন দিন চলেছে। বিএনপি তিন দিন মিডিয়া কভারেজ পেয়েছে। এতে বিএনপির লাভ হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সরকারের। এতে সরকারের দুর্বলতাও প্রকাশ পেয়েছে এইভাবে যে এত আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেও সরকার বিএনপির একটি বিভাগীয় সমাবেশও বন্ধ করতে পারেনি। বিএনপি যা চায় তা করতে পারে না, সরকার যা চায় তা করতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে এতদিন যে ধারণা চালু ছিল এবার তা কিছুটা ভুল প্রমাণ হয়েছে।

মানুষ এখন বলছে অন্য কথা। সরকার বা আওয়ামী লীগ বিএনপির লোকজনকে সমাবেশে উপস্থিত হতে নিরুৎসাহিত করলেও উপস্থিত হওয়ার পর তাদের ঠিকই থাকতে দিয়েছে, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে বাধা দেয়নি। সরকার যদি সত্যি বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে চাইতো, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা দলীয় সমর্থকদের দিয়ে তাড়া করে জমায়েত ভেঙে দিত। বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের কষ্ট দিয়ে সরকার কি বিএনপির অপকার করেছে, না উপকার করেছে? এখন তো মানুষ বলাবলি করছে, এতদিন বিএনপি ছিল লক্ষ্যহীন, এখন দলের কর্মীরা কষ্ট স্বীকার করে লক্ষ্যমুখী হচ্ছে। এখন পুলিশি তাড়ায় দৌড়ে না পালিয়ে প্রতিবাদী হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু এগুলো এখন আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এখনকার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, ১০ ডিসেম্বর কী হবে? এই প্রশ্নের এখন একাধিক উত্তর মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। কেউ মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত ১০ ডিসেম্বর কিছুই হবে না। কেউ মনে করছেন, এতটা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হবে যা নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। কেউ বলছেন, ১০ ডিসেম্বর সরকারের পতন হবে না, তবে পতনের ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠবে। আবার এমন মতও আছে যে, বিএনপি যদি সেদিন রাজপথ দখল করে সরকার পতনের ডাক দেয়, তাহলে তাদের এমন শিক্ষা দেওয়া হবে, যাতে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে বহু বছর লাগবে।

আরও পড়ুন: রাজনীতিতে মাত্রাহীন মিথ্যাচার!

সব কিছু মিলিয়ে সরকার যে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছে তাতে সন্দেহ নেই। সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপির জেদ কেউ ভালো চোখে দেখছে না। নয়াপল্টনে সমাবেশ করার পেছনে বিএনপির কোনো বদমতলব থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিএনপি একটি বড় সমাবেশ করে তাদের শক্তি তথা জনসমর্থন দেখাতে চায়। বড় সমাবেশ বা বেশি মানুষের উপস্থিতি দেখানোর জন্য নয়াপল্টন বেছে নেওয়া থেকেই মনে হয়, তারা কোনো কারণে শুধু রাজপথ নয়, গলিপথও খুঁজছে। নয়াপল্টন নানা কারণে ঢাকা শহরের একটি কেন্দ্রবিন্দু। এই রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিএনপি সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল নিলে সরকার তা কেন বরদাশত করবে? বছর কয়েক আগে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামির অবস্থান এবং তা নিয়ে কি রাজনীতি হয়েছিল, তা সরকার কেন সবারই মনে থাকার কথা।

বিএনপি যতই বলুক, আগের ৯টা সমাবেশ যেমন শান্তিপূর্ণ হয়েছে, ঢাকার সমাবেশও তেমন শান্তিপূর্ণই হবে, তা সরল বিশ্বাসে মেনে নেওয়া কঠিন। বিএনপির কর্মীরা এখন এক নেতার নির্দেশে চলে না। বেশি জনসমাগম দেখলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে কে কি করে বসবে বলা মুশকিল। এজেন্ট-প্রভোকেটর বড় সমাবেশে ঢুকে পড়া কঠিন কিছু নয়। কে কোথা থেকে কোন নাশকতার পরিকল্পনা করছে, কে বলতে পারে? বিএনপি তাদের সততা প্রমাণের জন্যই সমাবেশের স্থান নিয়ে জেদ ত্যাগ করা উচিত।

জনপ্রিয়তা নিয়ে শঙ্কা না থাকলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো আচরণ করতে হবে। ইয়াহিয়া ১৯৭০ সালের নির্বাচন দিয়েছিলেন এলএফও’র (লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক ওয়ার্ডার) অধীনে। কেউ কেউ বলেছিলেন, এটা তো পা বেধে দৌড়ে নামিয়ে দেওয়ার মতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আস্থা ছিল মানুষের ওপর। তিনি তাই নির্বাচন থেকে দূরে থাকার কোনো অজুহাত খোঁজেননি। বিএনপির যদি জনগণের ওপর আস্থা থাকে তাহলে জনসমাবেশের স্থান নিয়ে ত্যাড়ামি না করাই ভালো। বিএনপির সমর্থকরা নয়াপল্টনে যেতে পারলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা অন্য যেকোনো খোলা ময়দানেও খুশি মনেই যেতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের আলোচনা চলছে। শেষপর্যন্ত তৃতীয় একটি স্থানে যদি সমাবেশ হয়, তাহলে ১০ ডিসেম্বর ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হবে বলে আশা করা যায়। নিজেদের পছন্দের স্থান নিয়ে দুই পক্ষেরই ছাড় দেওয়ার মনোভাব থাকতে হবে। একদিনের একটি সমাবেশই রাজনীতির শেষ কথা হতে পারে না। এই জেদাজেদি থেকে অন্য পক্ষ সুযোগ নিতে পারে।

রাজনৈতিক মহল বলছে, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের সময় যত ঘনিয়ে আসছে এ নিয়ে উত্তাপ তত বাড়ছে। দুদলের বাগ্‌যুদ্ধের কেন্দ্রে আছে সমাবেশের স্থান। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। আর বিএনপি বলে আসছে, তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে। তবে নয়াপল্টন নিয়েও বিএনপির কিছুটা নমনীয় হওয়ার আভাস মিলেছে। দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রয়োজনে নয়াপল্টনের বাইরে সমাবেশ করার চিন্তা আছে তাঁদের। তবে সেটা সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের আচরণের ওপর নির্ভর করবে।

নয়াপল্টনে সমাবেশের প্রচারপত্র বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘সরকার যদি কোনো ঝামেলা না করে, আমাদের দিক থেকে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা নাই। সরকারের যদি ভালো কোনো প্রস্তাব থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া, আমাদের বলতে পারে। বিকল্প হতে পারে। তবে সে বিকল্প কখনোই সোহরাওয়ার্দী হবে না।’

আরও পড়ুন: ডিপ স্টেট!

নয়াপল্টনে নিজেদের কার্যালয়ের সামনেই বিএনপি সমাবেশ করবে, সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা কিছুতেই চাইছে না। এ জন্য পুলিশ বিএনপিকে নয়াপল্টনের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। সেখানেই তারা শেষ পর্যন্ত সমাবেশ করতে বাধ্য হবে। এমনটা ধরে নিয়েই নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সূত্র উল্লেখ করে গণমাধ্যমে যে খবর বের হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট, এখন পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে কোনোভাবেই নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে না দেওয়া। সোহরাওয়ার্দীতে না যেতে চাইলে তখন পূর্বাচল বা টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ বিবেচনা করা হতে পারে। ১০ ডিসেম্বরের আগ থেকেই নয়াপল্টন এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেখানে জমায়েতের কোনো সুযোগই দেওয়া হবে না।

সরকারের একজন মন্ত্রীর বরাত দিয়ে খবর বের হয়েছে, ১০ ডিসেম্বরের আগেই যদি বিএনপি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের দমন করার জন্য যা যা করা দরকার, তা করা হবে। তাঁরা মনে করছেন, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম যেভাবে শাপলা চত্বরে বসে পড়েছিল, নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিলে তেমনই কোনো ঘটনা হতে পারে। তাই একটি সীমানার মধ্যে বিএনপিকে রাখতে চায় সরকার। যাতে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

কয়েকটি বিভাগীয় সমাবেশে জনগমাগম দেখেই বিএনপি যদি সরকারের মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে দলটি ভুল করবে। মানুষের সহানুভূতি পেতে হলে নমনীয়তা দেখাতে হয়। সরকারের শক্তি নিয়ে তাচ্ছিল্য না করাই ভালো। আওয়ামী লীগও যে মানুষের জমায়েত করতে পারে তা যশোর ও চট্টগ্রামে দেখা গেছে। 

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!