বিনোদন

দুবাই শেখদের অভাবনীয় ভোগবিলাস, ধনসম্পদের অপচয়!

<![CDATA[

গাড়ি-বাড়ি, দামি গহনা এবং নানান শখ-আহ্লাদের জীবনযাপনকে যদি বিলাসী জীবন বলা হয়ে থাকে, সেদিক থেকে দুবাইয়ের শেখরা বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। তাদের বিলাসিতা এমন পর্যায়ের যে রাজা-বাদশাহরা পর্যন্ত এমন জীবন কল্পনাও করতে পারেন না।

আলো ঝলমলে আকাশচুম্বী সব অট্টালিকায় তাদের বসবাস। সোনার তৈরি গাড়িতে চড়েন তারা। তাদের খাবার-দাবারও যেন সোনার তৈরি। তাদের নিত্যনতুন শখ, সাধ আর আহ্লাদ দেখে যে কারো চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।

দুবাই শহর কেমন

অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা, দুবাই একটি দেশ। কিন্তু দুবাই আসলে কোনো দেশ না। এটা একটা শহর। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর অন্যতম সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর দেশটির সাত রাজ্যের একটি এই দুবাই। রাজ্য ও রাজধানীর নাম একই।

বিশ্বের কাছে দুবাই এক স্বপ্নপুরীসম। বিলাসে ও আভিজাত্যে অতুলনীয়। আকাশচুম্বী অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল-শপিংমল, অত্যাধুনিক সব স্থাপত্য আর রাতের চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি যে কাউকেই মুগ্ধ করে।

৮৩০ মিটার উঁচু বুর্জ খলিফার মতো বড় বড় অট্টালিকা, তার পা ছুয়ে কলকল রবে বহমান সুদৃশ্য ঝরনা ‘দুবাই ফাউন্টেন’, সাগরপাড়ের কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ ও সর্বোপরি সংগীতের সুরের সঙ্গে নৃত্যরত চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি মানুষকে চুম্বকের মতো টানে। আর এসব কারণে দুবাই পর্যটক ভ্রমণপ্রিয়দের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।

দুবাইয়ের শেখ কারা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাত রাজ্যের মধ্যে জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি দুবাইয়ে। ৩৫ লাখ মানুষের বাস এখানে। তবে এর মধ্যে বিদেশিদের সংখ্যাই বেশি। শতকরা ৮৩ শতাংশ। বিদেশি নাগরিকের বেশির ভাগই আবার বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের। মাত্র ১৭ ভাগ আমিরাতি। 

আরব কোনো অঞ্চল বা এলাকার নেতা বা গভর্নরকে শেখ বলা হয়ে থাকে। দুবাইয়ে এমন তিনজন শেখ আছেন, যাদের হাতে শহরের শাসনভার ন্যস্ত। আবার শেখ হলো সিনিয়র নাগরিকদের প্রদত্ত একটি সম্মানসূচক উপাধি। দুবাইয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেককেই শেখ বলা হয়।

আরও পড়ুন : চোখ ধাঁধানো প্রযুক্তি ও আধুনিক শহর দুবাই

এক প্রতিবেদনমতে, দুবাইয়ে এমন শেখ রয়েছেন প্রায় ৫২ হাজার। এদের প্রত্যেকেই মিলিয়ন ডলারের মালিক। এই শেখরা রাজা-বাদশা তথা শাসক নন, তবে তাদের জীবনযাপন রাজা-বাদশাহদেরও হার মানায়।

আরাম-আয়েশে শেখদের জুড়ি নেই

দুবাই বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ও বিলাসবহুল পর্যটন গন্তব্য, যা একে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর তালিকায় স্থান করে নিতে সাহায্য করেছে। তেলের পাশাপাশি বাণিজ্য, পরিবহন, পর্যটন ও শিল্প-প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে এর অর্থনীতি। বিশাল সেই অর্থনীতির বেশির ভাগই শেখদের নিয়ন্ত্রণে।

দুবাই শেখদের হাতে তাই অঢেল অর্থ। তবে অর্থ ও প্রাচুর্যের জন্য তারা যেমন বিশ্বজুড়ে খ্যাত, তেমনিভাবে নানা বিলাসবহুল ও অদ্ভূত সব শখের জন্যও তাদের বেশ পরিচিতি রয়েছে। কোনো কিছু একবার ভালো লেগে গেলে যত টাকাই লাগুক তা পূরণ করবেই তারা। এ ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে তাদের জুড়ি মেলা ভার।

দুবাই শেখরা নিজেদের বিশ্বের সবচেয়ে সেরা বিবেচনা করেন। শুধু তাই নয়, সময়ে সময়ে নিজেদের নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেটা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। দুবাই শেখরা বিশেষ করে স্বর্ণপ্রিয় মানুষ।

গাড়ি থেকে শুরু করে মোবাইল, এমনকি তাদের খাবারেও স্বর্ণের উপস্থিতি দেখা যায়। দুবাইকে ধনী শেখদের শহর বলা হয়। কারণে-অকারণে বিলাসিতা করা দুবাই শেখদের জীবনের একটি অংশ। শেখ ও তাদের সন্তানরা অন্যকে দেখানোর জন্যও কোটি কোটি দিরহাম খরচ করেন।

এটিএম বুথ থেকে টাকা নয়, বেরিয়ে আসে স্বর্ণের বার

সাধারণত এটিএম বুথ বসানো হয় জরুরি ও দ্রুত অর্থের প্রয়োজন মেটাতে। আর দুবাইয়ে এটিএম বুথগুলো বসানো হয় শেখদের দামি দামি শখ পূরণের নিমিত্তে। এটিএম মেশিন থেকে সাধারণত কাগজি মুদ্রাই বের হয়। কিন্তু দুবাইয়ের বুথগুলো থেকে টাকা নয়, বের হয় স্বর্ণের বার।

এটাকে তারা নাম দিয়েছে গোল্ড ভেন্ডিং মেশিন। নগদ টাকার বিনিময়ে আপনি ওই মেশিন থেকে ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনা সহজেই কিনে নিতে পারবেন। বিশ্ববাজারে সোনার দাম ওঠানামার কারণে প্রতি ১০ মিনিট পরপর মেশিনে মূল্য আপডেট করার সফটওয়্যার বসানো থাকে।

সোনার গাড়িতে ঘোরাঘুরি

ধনী কিংবা গরিব, বিশ্বের সব শহরেই কম-বেশি বিলাসবহুল ও দামি গাড়ি দেখা যায়। কিন্তু দুবাই এ ক্ষেত্রে একটা আলাদা শহর। এখানে রাস্তায় হরহামেশাই দেখা মেলে সোনার গাড়ি। অনেক সময় এসব গাড়ির চোখ ধাঁধানো ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। মানুষ সেগুলো দেখে বিস্মিত হয়। এসব গাড়ির একেকটার দাম শত শত কোটি ডলার। কারণ, সেগুলো বিশেষভাবে নকশা করা।

আরও পড়ুন : দুবাইয়ের আকাশে উড়ন্ত গাড়ি

প্রশ্ন হতে পারে, এত দামি গাড়িতে কারা চড়ে? জবাবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, দুবাইয়ের শেখরা। এক হিসাবমতে, ১৯৬৮ সালে দুবাই শহরে মাত্র ১৩টি গাড়ি ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুবাই আজ গাড়ির শহরে পরিণত হয়েছে। শুধু সোনার গাড়িই নয়, শেখদের মোবাইল ফোনগুলোও সোনায় মোড়ানো। কখনো কখনো তাতে হীরাও বসানো হয়।

সোনার থালায় খাবার খায় শেখরা

দুবাইয়ের শেখদের খাবারের মধ্যেও স্বর্ণ থাকে। শেখদের পছন্দ-অপছন্দ মাথায় রেখে শহরের কিছু রেস্তোরাঁ এমন বিরল কিছু খাবার পরিবেশন করে, যাতে স্বর্ণের বাহারি ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে হ্যাম্পস্টেড বেকারি ও ক্যাফে ইন দুবাইয়ের মতো রেস্তোরাঁর কথা বলা যায়। এই রেস্তোরাঁগুলোতে যে ফ্রেঞ্চ টোস্ট পরিবেশন করা হয়, তা ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের বিশেষ জালে মোড়া থাকে।

সোনার পেয়ালায় কেক

ইতালির কোকো গাছের বীজ ও উগান্ডার ভ্যানিলা দিয়ে তৈরি বিশেষ একধরনের কেক পাওয়া যায় দুবাইয়ে। এই কেক পরিবেশন করা হয় ২৩ ক্যারেটের খাঁটি সোনার এক বিশেষ পেয়ালায়। খেতে সাধারণ হলেও এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কেক। শুধু শেখরাই এর একমাত্র উপভোগকারী।

বনের হিংস্র পশুরা শেখদের সঙ্গী

পোশা প্রাণীর কথা উঠলেই কুকুর, বিড়াল বা ছাগল-গরুর কথাই আমাদের মনে আসে। কিন্তু এসব প্রাণী নিশ্চিতভাবেই অনেক সুন্দর ও নম্র-ভদ্র। কিন্তু দুবাইয়ের পোষা প্রাণীগুলো একেবারেই ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে দুবাই শেখদের ধারেকাছেও কেউ নেই। দুবাইয়ের ধনী শেখরা বনের পশুদের পোষ মানাতে ভালোবাসেন। সিংহ ও চিতাবাঘকে তারা নিজেদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন। জঙ্গল থেকে ধরে এনে অনলাইনে এসব পশু বিক্রি করা হয় ধনীদের কাছে।

আকাশে ওড়ার বদলে পাখি ওড়ে বিমানে

সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় পাখির নাম বাজপাখি। দেশের আইন অনুযায়ী, সাধারণ জনগণের এই পাখি ধরা কিংবা পোষা নিষিদ্ধ। তবে দুবাইয়ের শেখদের বেলায় সেই আইন খাটে না। তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এ পাখি পোষার বিশেষ অনুমোদন রয়েছে।

আরও পড়ুন : কালো টাকার স্বর্গরাজ্য দুবাই, নিষেধাজ্ঞার দাবি পশ্চিমাদের

শেখরা শুধু বাজপাখি পোষেই না, তারা যেখানেই যায় সেখানেই তাদের সঙ্গে থাকে বাজপাখি। এমনকি যখন তারা বিমানে চড়েন, তখনও। এ ক্ষেত্রে পাখিগুলো বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকে। বিমানে শেখদের পাশাপাশি তাদের জন্যও আলাদা আসন থাকে।

শেখদের আনন্দ-বিনোদন

দুবাইকে বলা হয় ‘গ্লোবাল ভিলেজ’, যার কোনো সীমানা নেই। আর সেই গ্রামের প্রভাবশালী ‘মাতবর’ হলেন শেখরা। অঢেল টাকা-পয়সার মালিক শেখরা যা কিছু সুন্দর তার সবকিছুই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। জীবনকে নানাভাবে উপভোগ করতে তারা তাদের চারপাশকে সাজিয়েছেন নানা অনুষঙ্গে।

শেখদের আনন্দ-বিনোদের জন্য রয়েছে বুর্জ আল-খলিফা, বুর্জ আল-আরব থেকে শুরু করে দুবাই মল, পাম আইল্যান্ড, স্কাইডাইভিং, মরুভূমিতে সাফারি, মিরাকল গার্ডেন, কোরআন পার্ক, প্রমিজ ব্রিজসহ বহু বিনোদন পার্ক ও আকর্ষণীয় জায়গা।

স্কাইডাইভ: পৃথিবীর অনেক দেশেই স্কাইডাইভ রয়েছে। কিন্তু ‘দুবাই স্কাইডাইভ’ অন্যদের তুলনায় ব্যতিক্রম। দুবাইতে স্কাইডাইভ করতে হলে অনলাইনে ২-৩ দিন আগে বুকিং দিতে হয়। স্কাইডাইভ করা মানে আপনি পৃথিবীর এক অন্যরকম সৌন্দর্য উপভোগ করার সাক্ষী হলেন। প্লেন থেকে জাম্প দেয়ার পর ‘পাম জুমাইরাহর’ ওপর থেমে দুবাই শহরের যে ভিউ আপনি দেখতে পাবেন, তা এককথায় অসাধারণ।

মুভি থিয়েটার: দুবাইয়ে বিভিন্ন সমুদ্র বিচের পাশেই এবং সুন্দর পরিবেশে সাজানো-গোছানো অনেক মুভি থিয়েটার রয়েছে। সে দেশের মুভি থিয়েটারগুলো এত বেশি সুন্দর, ছবি উপভোগ করার থেকেও সিনেমা হলটি বেশি উপভোগ্য লাগবে আপনার কাছে। অবশ্যই দুবাই গেলে এই মুভি থিয়েটারগুলোতে ছবি দেখবেন।

সমুদ্র বিচ: দুবাইয়ে অনেক সুন্দর কিছু সমুদ্র বিচ রয়েছে, যা একেকটি দেখতে আমাদের স্বপ্নের মতো। একটি বিচ থেকে দেখা যায়, ‘পাম জুমাইরাহ, আরেকটি থেকে দেখা যায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্টার সমৃদ্ধ ও বিলাসবহুল হোটেল ‘বুর্জ আল আরব জুমাইরাহ’। এ ছাড়াও রয়েছে দেখার মতো আরও অনেক সমুদ্র বিচ।

পার্ক: সকাল কিংবা বিকেলে একটু হাঁটার জন্য রয়েছে ‘আল বারশা পন্ড’ পার্ক। সেখানে লেক ও গাছের সমারোহে অপরূপ এক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। দুবাইয়ে এত বিশালসব দালানের মাঝে গাছ খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। কিন্তু এখানে তার ভিন্ন একটি রূপ রয়েছে। সবচেয়ে উঁচু টেনিস কোর্ট।

আরও পড়ুন : ধন-সম্পদ দুবাইয়ে সরাচ্ছে রুশ বিত্তশালীরা

১৯৭০ সালে ওই জায়গায় ছিল মরুভূমি। মাত্র কয়েক বছরে সেই মরুভূমি হয়ে উঠল পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর একটি শহর। টেনিসে দুবাই বিশ্বসেরা না হলেও দেশটিতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু টেনিস কোর্ট। দুবাইয়ের বুরজ আল আরব হোটেলের ছাদে এটি বানানো হয়েছে।

পাম আইল্যান্ড

রাজারা যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারেন। তাদের আছে অঢেল সম্পদ ও আজ্ঞাবহ কর্মচারী। রাজারা বড়ই খেয়ালি। ইচ্ছে হলো সাগর বুকে দ্বীপ বানাবেন। ব্যস, শুরু হয়ে গেল কাজ। রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও ঘটনাটি বাস্তব। দুবাইয়ের শান্ত সাগরের বুকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপ। তা-ও আবার তিনটি।

কৃত্রিম হিসেবে দ্বীপগুলো বিশ্বে যত বিস্ময় জন্ম দিয়েছে তার চেয়েও বেশি আকর্ষণ করছে এগুলোর আকৃতি। দ্বীপ তিনটি হুবহু পাম গাছ আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে। মানবেতিহাসে সবচেয়ে বড় কৃত্রিম দ্বীপগুলোর নাম পাম জুমায়রা, পাম জাবেলে আলি, পাম দেইরা। পাম জুমায়রা ও পাম জাবেলে আলি যথাক্রমে জুন ২০০১ ও অক্টোবর ২০০২ সালে শুরু হয়ে নভেম্বর ২০১৪ সালে পাম জুমায়রার কাজ শেষ হয়।

দুবাইল্যান্ড পার্ক

দুবাই সবসময় চায় নির্মাণের দিক দিয়ে শহরটিকে যেন পৃথিবীর সবাই সমীহ করে। সে কারণে দুবাইয়ে নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয় দুবাইল্যান্ড নামে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ থিম পার্কের। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার পর্যটক পার্কটিতে বেড়াতে যেতে পারবেন।

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অ্যাকোরিয়াম

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অ্যাকোরিয়ামটি অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম সর্ববৃহৎ দুবাই শপিং মলে। অ্যাকোরিয়ামটিতে ৩৩ হাজার প্রজাতির প্রাণী রাখা আছে।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button
error: Content is protected !!