খেলা

সুনামগঞ্জে সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

<![CDATA[

বোরো মৌসুমের শুরুতেই সুনামগঞ্জের হাওড়গুলোতে পানির তীব্র সংকট। বিল সেচে ও হাওরের বাঁধ কেটে মাছ ধরা, হাওড়ের অভ্যন্তরীণ খান ও নালা ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত বাধ নির্মাণ, বোরো মৌসুমের শুরুতেই সেচ তীব্র সংকট আকার ধারণ করেছে। এ কারণে শুকিয়ে গেছে ফসলের মাঠ।

জেলার দেখার হাওড়ে পর্যাপ্ত পানি ছাড়াই শুষ্ক জমিতে হালচাষ করছেন তারা। ফলে পানির অভাবে জমিতে পর্যাপ্ত কাদা তৈরি হচ্ছে না। হাওরের উঁচু জমির আশপাশ পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। কৃষকরা দীর্ঘ পাইপ দিয়ে কোনো রকমে জমি ভিজিয়ে হালচাষের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন। সেচ সংকটের কারণে জমি হালচাষ করতে না পারায়  বীজতলা থেকে ধানের চারা উত্তোলন করছেন না। অসময়ে হাওড়ের পানি কমে যাওয়ায় জলাশয় ও খালবিল শুকিয়ে গেছে।

হাওরের আগেভাগে পানি সরে যাওয়ার চিত্র শুধু দেখার হাওরেই নয় হালিরহাওড়, শনিরহাওড়,পাকনার হাওড়, করচার হাওড়, ছায়ার হাওড়,নলুয়ার হাওড়ের মাটিয়ান হাওড়সহ বড়বড় সব হাওড়ের উঁচু জমিতে সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে সদর,শান্তিগঞ্জ, জামালগঞ্জ, দিরাই, জগন্নাথপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজারসহ জেলার ৭টি উপজেলার হাজার হাজার কৃষক বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

 

সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের দরিয়াবাজ গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, গেল বার থেকে এবার হাওরের উঁচু জমির পানি দ্রুত নেমেছে। কারণ এবছর পরপর তিনবার বন্যার কারণে জমিতে কোন বনচালিয়া হয়নি। তাই দ্রুত সরে গেছে পানি। এখন হালচাষ করা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: মাদারীপুরে পাটের বাম্পার ফলন, ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক

ইছাঘড়ি গ্রামের আলী হোসেন বলেন, জেলেরা চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার ফরে ক্ষেতের আইল নষ্ট হয়ে সমান হয়ে গেছে তাই কোনো জমিতে পানি আটকে থাকেনি।

বেতগঞ্জ এলাকার কৃষক বিজন মিয়া বলেন, এবছর দেখার হাওড়ের তীব্র সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। হাওড়ের উঁচু জমি পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। কোনো রকমে হালচাষ দিয়ে চারা রোপণ করতে পারলেও পরে আর পানি পাওয়া যাবে না।

বড়দই বিলের বাঁধ কেটে মাছ ধরার কথা অস্বীকার করেন ইজারাদার সৈয়দ মনোয়ার বলেন, বাঁধ কেটে বিলের মাছ ধরা হয়নি। এবছর বন্যার কারণে ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে  এমনিতে পানি নদীতে চলে গেছে। কৃষকরা সময় মতো খেয়াল না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হক বলেন, এবছর তিনবারের বন্যার কারণে হাওড়ের জলজ উদ্ভিদ হয়নি ও জেলেরা বাঁধ কেটে মাছ ধরায় হাওড়ের উঁচু জমির পানি দ্রুত নেমে গেছে। এছাড়া কার্তিক মাস থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাটি অনেক শুকিয়ে গেছে। এখন সুরমা নদীতে সেচ প্রকল্প চালু করলে মোল্লাপাড়া, পান্ডারগাঁও মান্নারগাঁওসহ তিন ইউনিয়নের কৃষক দেখার হাওরের উচু জমিতে চাষবাস করতে পারবেন।

আরও পড়ুন: ধানের দরপতনে লোকসানের শঙ্কায় কৃষক

সুনামগঞ্জ বিএডিসি সেচ এর সহকারী প্রকৌশলী কাজী হুসনে আরা রাফি জানান,  বাজেট ও মেশিনারিজ সংকটের কারণে সেচ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বলেন জেলার ৩০ হাজার হেক্টর জমি পুরোপুরি বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। বৃষ্টি হলে ফসল হবে না হলে হবে না।

তিনি জানান, এক কেজি ধান উৎপাদন করতে তিন হাজার লিটার পানি লাগে। চারা লাগানোর পর থেকে ৭৫ দিন পর্যন্ত জমিতে কমবেশি পানি থাকতে হয়।  ১০ হাজার হেক্টর জমি সেচের অভাবে সারা বছর পতিত থাকে। জমিতে পানি সেচ দেয়ার জন্য ২৯টি গভীর নলকূপ, ৩ হাজার ৭৫৪ টি অগভীর নলকূপ, ১৩ হাজার ৩৭৫টি লো লিফট পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮২৫ টি ডিজেল চালিত সেচ পাম্প ও ৫১০ টি বিদ্যুৎ চালিত পাম্প রয়েছে। দেখার হাওরের সেচ দেয়ার জন্য ৫ টি পাম্প স্থাপনের অফিসিয়াল প্রক্রিয়া চলছে। এটি হলে সমস্যার সমাধান হবে।

তিনি  দাবি করেন, এখনও সেচ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেনি। চলতি বছর ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!