বাংলাদেশ

বিক্ষোভ মোকাবিলার কৌশল নিয়ে বিভক্ত ইরান

<![CDATA[

ইরানে কয়েকমাস ধরে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ মোকাবিলায় দেশটির রক্ষণশীল প্রশাসনের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। বলপ্রয়োগ নাকি সমঝোতার মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রশমিত করা হবে, তা নিয়ে ভাগ হয়ে পড়েছে শিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির শাসকরা।

গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী ইরানি কুর্দি মাহসা আমিনি নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার পর থেকেই ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ বিক্ষোভ ঠেকাতে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক নাদের হাশেমি বলেন, ‘চলমান বিক্ষোভ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, এ নিয়ে ইরান সরকারের ভেতরে আমরা দ্বন্দ্ব দেখতে পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, অধিকাংশ কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এর বিপরীতে গিয়েও সমাধান খোঁজার মানুষ থাকেন।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণের দায়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং ভিন্নমতাবলম্বী অনেককে মুক্তির বিষয়গুলো থেকে যে ধারণা পাওয়া যায়, দেশটির শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে কেউ কেউ অপেক্ষাকৃত নরম পথও অবলম্বন করতে চাচ্ছেন।

চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দেয়ায় অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর দেশটির জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারানেহ আলিদোস্তিকে গ্রেফতার করেন পুলিশ। তবে বুধবার (৫ জানুয়ারি) আলীদোস্তি জামিন লাভ করেন।

আরও পড়ুন: ইরানে ২ তরুণ বিক্ষোভকারীর প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

এ ছাড়া বিক্ষোভের শুরুর দিকে গ্রেফতার হওয়া দুই ভিন্নমতাবলম্বী মাজিদ তাভাকোলি এবং হোসেন রোনাঘিকে কয়েক সপ্তাহ পর মুক্তি দেয়া হয়। তাদের মধ্যে রোনাঘি অনশন করে মুক্তি পান। বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছিল। 

তবে সবশেষ চলমান বিক্ষোভে অংশগ্রহণ এবং দেশটির আধা সামরিক বাসিজ বাহিনীর এক সদস্যকে হত্যার দায়ে শনিবার (৭ জানুয়ারি) দুই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা প্রমাণ করে শাসকগোষ্ঠীর কেউ কেউ শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে চলমান বিক্ষোভ মোকাবিলা করতে চান।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে চলমান বিক্ষোভ ইরানের শাসকদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইরানের বিচার বিভাগ বলছে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার লোককে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চারশ জনকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভের জেরে এখন পর্যন্ত কয়েক’শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে কয়েক হাজার। ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনের পুনর্বিচারের দাবি মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে পুনর্বিচারের পর মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে কয়েকজনের।

আরও পড়ুন: শতাধিক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে: আইএইচআর

তবে বিক্ষোভে অংশগ্রহণের দায়ে শতাধিক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর)। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইরান বিশেষজ্ঞ এবং ‘পোস্ট-রেভ্যুলেশনারি ইরান: এ পলিটিক্যাল হ্যান্ডবুক’ বইয়ের সহ-লেখক মেহরজাদ বোরোউজেরদি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ইরানের শাসকগোষ্ঠী জানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে আরও বেশি মানুষ রাস্তায় নামতে পারে এবং এটি সাধারণ মানুষকে আরও উত্তেজিত করে তুলবে। অন্যদিকে, তারা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরেও পিছপা হবে না যাতে মানুষ ভয় পায়।

যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্টার্ন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের পরিচালক আনুশ এহতেশামি বলেন, পুনর্বিবেচনার ঘটনাগুলোতে দেশি-বিদেশি চাপের প্রতিফলন ঘটেছে। তার মতে, বিক্ষোভ প্রশমনে শাসকদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে।
 

সূত্র: এএফপি

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!