ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সুরক্ষায় কেন্দ্রীয়ভাবে নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এখন থেকে ২৫০ শয্যার সবকটিতে চাহিদানুযায়ী রোগীরা অক্সিজেন সেবা পাবে। একইসাথে হাসপাতালের নতুন ভবনের ১৫০ শয্যায় পুরোদমে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে। আইসিইউ ইউনিটে আরো ১০ শয্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে।
রবিবার দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে অক্সিজেন ট্যাংকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন হাজারী। এ উপলক্ষে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) থোয়াই অংপ্রু মারমা, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি পিপি হাফেজ আহম্মদ, পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন আক্তার।
আরএমও ডা. ইকবাল হোসেন ভূঞার সঞ্লচনায় সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী। ইউনিসেফ এর অর্থায়নে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার লাইন স্থাপন করা হয়। স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেড লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহ করেন।
সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেছেন, করোনার শুরু থেকে যেসব সিলিন্ডার দিয়ে হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেয়া হতো অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের ফলে সেগুলো আর প্রয়োজন হবেনা। এজন্য উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলো সিলিন্ডারগুলো দিয়ে দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। এতে করে গ্রামের রোগীরা যথাযথ সেবা পেলে জেলা সদর হাসপাতালে এর চাপ কমবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে মুমূর্ষ রোগীদের কথা চিন্তা করে আইসিইউ ইউনিটে আরো ১০টি শয্যার বাড়ানোর কাজ চলছে। কোন রোগী যাতে চিকিৎসার অভাবে মারা না যান সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা ডাক্তার-নার্সরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে রোগীরা যেন সবধরনের সেবা পায় সেজন্য পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তিনিও যথাযথ ভূমিকা রাখছেন। সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী যথাযথ ভূমিকা রাখায় ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্য পরিচালক।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ইকবাল হোসেন জানান, করোনা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের নতুন ভবনকে আইসোলেশন ইউনিট করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সহসাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এটির অনুমোদন মিলবে। বর্তমানে ৩০ শয্যার আইসোলেশনে ৮ জন কনসালটেন্ট, ১০ জন মেডিকেল অফিসার ও ২৪ জন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। ১৫০ শয্যার কোভিড ইউনিট চালুর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল চাওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জুন মাস থেকে ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ৩০শয্যার ডেডিকেটেড ইউনিটে রোগী ভর্তি চালু হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রোগীর চাপ নির্ধারিত শয্যার পাঁচগুন বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় করোনা ইউনিট সম্প্রসারন করা হয়। চলতি বছরের জুনে দ্বিতীয় তলায় ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ও করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) চালু হয়। গত জুলাই মাসে করোনায় আক্রান্ত এমনকি উপসর্গ নিয়ে ৮২ জন মারা যান।
ওই সূত্র জানায়, এখন করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর উল্লম্ফন আগস্টেও অব্যাহত আছে। সার্বিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। চলতি আগস্ট মাসের গত ৮ দিনে আইসোলেশন ইউনিটে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশত ছুঁই ছুঁই।