এলসি জটিলতায় বন্ধ মোটরসাইকেল আমদানি
<![CDATA[
দেশের সিবিইউ (কমপ্লিট বিল্ড ইউনিট) মোটরসাইকেলের শোরুমগুলো বাইকশূন্য হতে বসেছে। ডলারের হিসাব মেলাতে গিয়ে কয়েক মাস ধরে কোনো এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে যেমন সংকুচিত হচ্ছে ব্যবসা তেমনি প্রতিযোগিতার বাজারে বাড়ছে দাম।
যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে দেশে মোটরসাইকেলের কদর বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের তথ্য বলছে, ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার জোগানে এই বাহনের বাজার ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে বছরে দরকার হয় প্রায় ৬ লাখ ইউনিট।
এই চাহিদা মেটে সিকেডি, এসকেডি ও সিবিইউ বা কমপ্লিট বিল্ড ইউনিট মোটরসাইকেলের মাধ্যমে। এর মধ্যে দাম কিছুটা বেশি হলেও ফিনিশিং ও টেকসই বিবেচনায় স্মার্ট জেনারেশনের পছন্দের শীর্ষে সিবিইউ মোটরসাইকেল।
তবে ডলারের চাপে পড়ে কয়েক মাস ধরে দেশে মোটরসাইকেল আমদানি বন্ধ রয়েছে। এমন দাবি করে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এভাবে চললে থেমে যাবে তাদের ব্যবসা।
আরও পড়ুন: এলসি সংকটে স্থবিরের পথে যশোরের গাড়ি যন্ত্রাংশের ব্যবসা
ইউনিভার্স মোটরসের ব্যবস্থাপক তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, আমরা বাইকের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি, কিন্তু বর্তমান বাজার অনুসারে তা করতে পারছি না। দামে বেড়েই যাচ্ছে। পাইপলাইনে যে বাইকগুলো ছিল, সেগুলো সব চলে আসছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে আমার শোরুম বন্ধ করে দিতে হতে পারে।
কোনো ব্যাংক এলসি নিচ্ছে না, এমন অভিযোগ করে সুপার রেসের স্বত্বাধিকারী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের পাইপলাইনের গাড়িগুলো দিয়ে আমরা বর্তমানে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। তা দিয়ে আমরা হয় তো সর্বোচ্চ আরও এক চলতে পারব। ব্যাংকগুলো বেঁধে দিয়েছে যে একশো শতাংশ মার্জিন এলসি করতে হবে, আমরা সেটিতে রাজি হয়েছি। তবে আমাদের এলসি খোলা যদি একেবারেই বন্ধ থাকে, তাহলে আমাদের এ ব্যবসার কি হবে?
এ অবস্থায় ব্যবসা ধরে রাখার কৌশল হিসেবে এলসি চালুর দাবি চরম সংকটে পড়া মোটরসাইকেল আমদানিকারক সমিতির। বাংলাদেশ সিবিইউ মোটরসাইকেল ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি নুরুন নাহার লীনা বলেন, আগে আমি প্রতি মাসে দেড়শ’ মোটরসাইকেল বিক্রি করেছি। তবে গত মাসে আমি বড়জোর ৩ থেকে ৪টি মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পেরেছি। মোটরসাইকেল নেই তো। আমরা ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক মোটরসাইকেল আমদানি করতে পারছি না। আগে আমার দুটো দোকান ছিল। তার মধ্যে একটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো এলসি খুলতে পারছি না। আমরা মোটরসাইকেল প্রতি ১৫৪ শতাংশ ট্যাক্স দেই। সেই সঙ্গে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও সরকার লাভবান হচ্ছেন। তা ছাড়া আমরা বিক্রিকালীন ভ্যাটও দিচ্ছি।
আরও পড়ুন: লাখ ডলারের মার্সিডিজ আমদানির এলসি মাত্র ২০ হাজার ডলার: গভর্নর
একদিকে ডলার ব্যয় অন্য দিকে রাজস্ব আদায়; এই দুই চ্যালেঞ্জ সমন্বয় করে এখাতের ব্যবসায়ীদের মোটরসাইকেল আমদানির সুযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একটি চাপ বিরাজ করছে। অবশ্যই সেটি বিবেচনা করতে হবে। একইসঙ্গে এটিও সত্যি যে দেশের ভেতরে মোটরসাইকেলের একটি বড় চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি সীমিত পরিসরেও এলসির অনুমতি দিতে পারি আর সেটি যদি ১০০ শতাংশ এলসি মার্জিনেও হয়, তাহলে সাময়িকভাবে হলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ের মধ্যেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ ইতোমধ্যে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে সরকার চাপের মধ্যে রয়েছে।
বুয়েটের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে যেখানে এক হাজার জনের মধ্যে ৭ জনের মোটরসাইকেল রয়েছে। সেখানে ভিয়েতনামে প্রতি ৪ জনে রয়েছে ১টি আর ভারতে ৩০ জনের মধ্যে মোটরসাইকেল রয়েছে একজনের।
]]>