সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ কর্তৃপক্ষ: ইলিয়াস কাঞ্চন
<![CDATA[
সড়কে যেমন দুর্ঘটনা কমছে না, তেমনি শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ কর্তৃপক্ষ এটাও স্বীকার করছে না; এমন মন্তব্য করেছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
সম্প্রতি সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
কাঞ্চন বলেন, একটা দুর্ঘটনা ঘটলে আন্দোলনের পর গাড়ির নাম ও রুট পারমিট বাতিল করলেই এটার সমাধান হবে না, এতে শৃঙ্খলা ফিরবে না। এর জন্য সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে হবে।
ইলিয়াস কাঞ্চন প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনা কমছে না, এটাও কর্তৃপক্ষ স্বীকার করছে না। ঢাকা দূষণের ক্ষেত্রে যেমন এক নম্বর আবার উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রেও আমরা এক নম্বর হব। তবে একটা কাজের উদ্যোগ নিলে সমাধান করতে হয়, শেষ করতে হয় সেই জিনিসটা যা আমরা শিখিনি। নিয়মশৃঙ্খলা নেই বলে যাত্রীরাও রাস্তায় যেখানে-সেখানে থেকে উঠছেন, আবার গাড়ির চালকও থামাচ্ছেন। সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তবে বিআরটিএর দাবি, এসব ক্ষেত্রে তারা অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয় তারা।
বিআরটিএর রোড সেফটির পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব ই রব্বানী সময় সংবাদকে বলেন, রাজধানীতে তিনটি রুটে কোম্পানিভিত্তিক গাড়ি পরিচালিত হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে সব রুটে যদি গাড়ি পরিচালিত হয়, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না। যেসব গাড়িগুলো চালু করা হয়েছে তাদের মধ্যে কিন্তু এ ধরনের অসম প্রতিযোগিতা নেই।
রাজধানীতে বেপরোয়া বাসচাপায় প্রায় প্রতিদিনই ঝরে প্রাণ। কখনো কখনো দুর্ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবির মুখে ঘাতক পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করে বিআরটিএ। কিন্তু কিছুদিন পরই অন্য নামে, রুট পাল্টে সড়কে নামে ওই পরিবহনের বাস। পাল্টায় না মালিক, চালক কেউই। পাল্টায় না দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর স্বভাবও। আবারও দুর্ঘটনায় হয় প্রাণহানি। এ যেন এক নাম পাল্টানোর খেলা। নিরাপদ সড়কের দাবি বাস্তবায়নে বিআরটির নজরদারি নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: জামালপুরে সড়কে ঝরল যুবকের প্রাণ
একসময় রাজধানী দাপিয়ে বেড়াত জাবালে নূর পরিবহন। লাগামহীন সব কর্মকাণ্ড আলোচিত না হলেও ২০১৮ সালে দুই শিক্ষার্থী রাজিব ও মিমকে পিষে মারার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনের মুখে বিআরটিএ বাধ্য হয় ও পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করতে। এরপর নূরে মক্কা, নিউ ভিশন নামে সড়কে নামে জাবালে নূরের প্রায় ৩০০ বাস।
গাড়িতে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ২০১৯ সালে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রুটের বাস স্বর্ণলতা পাল্টে হয় কটিয়াদী এক্সপ্রেস। ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ প্রথমে কলেজছাত্রী সিনথিয়াকে চাপা দিয়ে গুরুতর আহত করে সুপ্রভাত পরিবহন। এরপর পালিয়ে যাওয়ার সময় পিষে মারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরারকে। জোরালো আন্দোলনের মুখে আবার শুরু হয় নাম পরিবর্তন খেলার। হতে থাকে আকাশ এন্টারপ্রাইজ, সম্রাট পরিবহন, ট্রান্সলাইন পরিবহন, ভিক্টর ও ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহন। ২০১৯ সালে নাম পাল্টে খেল দেখায় ভিক্টর পরিবহন, পিষে মারে সংগীত পরিচালক পারভেজ রবকে। ২০২২ এ রাজধানীর সোনারগাঁও এলাকায় এক কনস্টেবলকে পিষে মারে ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাস।
সর্বশেষ চলতি মাসের ২২ তারিখে যমুনা ফিউচারপার্কের সামনে ঘাতক বাস ভিক্টর ক্লাসিক ওরফে সুপ্রভাতের চাপায় প্রাণ হারান নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাদিয়া। আবারও দাবি ওঠে ঘাতক বাসের রুট পারমিট বাতিলের।
এক জরিপে দেখা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে দুর্ঘটনা এবং হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, যার মধ্যে পথচারী ও শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। রুট পারমিট বাতিল, পরিবহনের বেপরোয়া চলাচলসহ নানা বিষয়ে কথা হলো হয় তাদের সঙ্গে।
কিছু মিল পাওয়া গেল পরিবহন শ্রমিকদের বক্তব্যেও। নাম পাল্টে সড়কে চলাচলের কথা স্বীকার করে, তুলে ধরলেন যাত্রী, পুলিশ, মালিকদের আচরণের বিষয়গুলো।
সাধারণ মানুষ জানান, শুধু বাসের নামই পরিবর্তন হয়েছে, চালক ও হেলপারের স্বভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আর ভিক্টর পরিবহনের চালক ও হেলপার বলেন, ভিক্টর পরিবহনের নাম আগে সুপ্রভাত ছিল, তখন থেকে আমি এ গাড়ি চালাই। আসলে নাম পরিবর্তন করে কিছ হবে না, সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। যাত্রীদেরও সহনশীল আচরণ করতে হবে।
ভুক্তভোগী এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, পুলিশ প্রশাসন গাড়িটি আটকে ৫০০ টাকা নেবে, তখন আমি কী করব, আমি তো মানুষ, আমারও তো চলতে হবে, এ জন্য গাড়ি জোরে টান দেই। আরেকজন বলেন, কোনো দিন টাকা ঘরে নিতে পারি, আবার অনেকদিন পাইও না।
সড়ক নিরাপদ করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দেয়ার তাগিদ সাধারণ মানুষের।
]]>




