জেলা পরিষদ নির্বাচন: ফেনীতে কে পাচ্ছে আওয়ামী লীগের টিকেট, নিশ্চুপ বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি->>
ফেনীতে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৃণমুল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের টিকেট সর্বত্র এখন নেই গুঞ্জন। তবে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় কোন সিদ্ধান্ত না থাকায় নিশ্চুপ রয়েছে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শহীদ খন্দকার বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আসন্ন জেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ন এক জরুরী সভা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহম্মদ। সভায় ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ খন্দকার আরও বলেন, সভায় আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ফেনী পৌরসভার জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে দলীয় আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর রাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী চুড়ান্ত করা হতে পারে।
সরকার দলীয় সূত্রে জানা যায়, ফেনী জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপন, সহ-সভাপতি মাস্টার আলী হায়দার, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্ত, সাবেক পৌর মেয়র হাজি আলাউদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনুল কবির শামীম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিনের নাম আলোচনায় রয়েছে। কেন্দ্র থেকে ফেনীর সম্ভব্য প্রার্থীদের অনেকেই ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ফেনীতে চেয়ারম্যান পদে কেন্দ্র মনোনয়ন দিলেও বিগত নির্বাচনে সদস্যপদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল। এবারও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক খায়রুল বাশার মজুমদার তপন বলেন, ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্র থেকে ফরম নিয়েছি। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যেখানেই তাকে কাজ করতে বলবেন, আমি সেখানে কাজ করবেন।’
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফেনীর সাবেক পৌর মেয়র হাজি আলাউদ্দিন বলেন, ‘চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্র থেকে ফরম নিয়েছি। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই প্রার্থী হবো।’
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাস্টার আলী হায়দার বলেন, ‘দলীয় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চাইছি। আশা করছি দল আমাকে হতাশ করবে না।’
ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী তিনজনের নাম পাঠাতে বলা হয়েছে। সে হিসেবে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন তিনি হবেন চুড়ান্ত প্রার্থী।’
এদিকে জেলা পরিষদের নির্বাচনের বিষয়ে ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নেবে না। পূর্বের এ সিদ্ধান্ত এখনো বলবৎ আছে। এ কারণে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে দলের কোনো নেতা এই নির্বাচনকে নিয়ে কোন তৎপরতা দেখাচ্ছেন না।’
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে একজন, সদস্যপদে প্রতি উপজেলায় একজন করে ৬ জন এবং তিন উপজেলা মিলে একজন করে
দুইজন নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। সে হিসেবে ফেনীতে ৯ জনের প্যানেল নির্বাচিত হবে।
ফেনী জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আগামী ১৭ অক্টোবর চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর এবং বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর। বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর; প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর। এবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। তফশিল অনুয়ায়ী ভোটের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।