বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
<![CDATA[
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত তিন দিন থেমে থেমে বৃষ্টি আর জোয়ার পানিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট সদর উপজেলার তিনটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি জমে এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ফলে ভৈরব নদের উপর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের দু’হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ।
মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক হাজার মানুষের ভোগান্তিতে পড়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকাকে বেড়িবাঁধের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এদিকে প্লাবিত এলাকার খুব শিগগিরই নদী তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
জেলার চিংড়ি মাছের ঘেরগুলোতে পানি ছুঁইছুঁই করছে। বৃষ্টিপাত ও নদনদীতে জোয়ারের পানির চাপ অব্যাহত থাকলে মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে মৎস্য বিভাগ। তবে এই বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন ধানের উপকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
তৃতীয় দিনের মতো উচ্চ জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ও করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টি ও জোয়ারে পিরোজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, গত তিন দিন ধরে জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রধান প্রধান নদ নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। করমজলে পানির উচ্চতা ছিল চার ফুট। সম্প্রতি সময়ে নদীতে যে হারে পানি বাড়ছে তাতে সুন্দরবনের প্রাণিকুল হুমকির মুখে পড়ছে। বনের বাঘ, শুকুর, হরিণ ও বানর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই প্রাণিকুল রক্ষায় সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন এই বন কর্মকর্তা।
বাগেরহাট কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় বাগেরহাট জেলাজুড়ে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে থেমে থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত দুই দিনে জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরইমধ্যে ফকিরহাট উপজেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শীতকালীন সবজি ক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। দ্রুত এই পানি নেমে না গেলে চাষিদের ক্ষতি হবে। তবে এই বৃষ্টিতে রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। জেলায় এরইমধ্যে ৮৭ ভাগ জমিতে রোপা আমন ধান রোপণ শেষ হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাগেরহাট (মোরেলগঞ্জ–শরণখোলা) চার আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ, বহরবুনিয়া, ঝিউধারা ও চিংড়াখালীসহ মোরেলগঞ্জ সদর ও শরণখোলা উপজেলার দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে বলেছি। প্রয়োজনে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠির ১১ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জের পৌরসভা অংশে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। ওই অংশে নদী তীর প্রতিরক্ষার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নদী তীর সংরক্ষণের কাজ চলতি অর্থ বছরে শুরু করা হবে। জোয়ারের পানি ওঠা রোধ করতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার জন্য ৯৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এর জন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তার সমীক্ষা খুব শিগগিরই শুরু হবে। ওই বাঁধ নির্মিত হলে পার্শ্ববর্তী রামপাল ও মোংলা উপজেলারও জোয়ারের পানি প্রতিরোধ হবে। এছাড়া বাগেরহাট সদরের জোয়ারের পানি ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে নদী তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ খুব শিগগিরিই শুরুর কথা জানান এই কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে লঘু চাপের প্রভাবে জোয়ার ও অব্যাহত বৃষ্টিতে বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার নদী তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কয়েকশ পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
]]>




