নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ মূল্যহীন: চুন্নু
<![CDATA[
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ মূল্যহীন। যে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, আইনে আছে নির্বাচনের সময় দেশের নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করবে। কিন্তু নির্বাহী বিভাগ যদি নির্বাচন কমিশনের কথা না শোনে তাহলে কী হবে তা বলা নেই। তাই নির্বাচন কমিশনের কথা নির্বাহী বিভাগ মানতে বাধ্য নয়।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় ভূমিহীন আন্দোলন সুরক্ষা পার্টি নামে জাতীয় পার্টির একটি সহযোগী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দিয়ে আইন করা হোক। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে যেন কমিশন সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনই ক্ষমতা চায় না।
তিনি আরও বলেন, শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশন স্ববিরোধী কথা বলছে। তারা বলছে, কাউকে হাতে পায়ে ধরে নির্বাচনে আনা নাকি তাদের কাজ নয়। তাহলে এতগুলো রাজনৈতিক দলের সাথে এত আলোচনা করলেন কেন? আবার তারা বলেছেন, সবাই চাইলে নাকি ব্যালটে নির্বাচন হবে। শাসক দল তো ইভিএম চায়, তাহলে কী বেশিরভাগ দলের মতামত উপেক্ষা করে ইভিএমে নির্বাচন করবে কমিশন?
আরও পড়ুন : জাপার সব পদ থেকে রাঙ্গাকে অব্যাহতি
জাতীয় পার্টি মহাসচিব আরও বলেন, ১৫০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন আরও ২ লাখ ইভিএম কিনতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ইভিএম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষনের জন্য দেশের ১০টি অঞ্চলে ১০টি ওয়্যার হাউস নির্মাণ করবে তারা। এ জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেটও তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেন, ইভিএম হচ্ছে ভোটের রেজাল্ট কারচুপির সিস্টেম। ১৫০ আসনে ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত উচ্চাভিলাষী। দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনায় ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। শুধু সরকার ও তাদের কয়েকটি মিত্র রাজনৈতিক দল ইভিএমে নির্বাচন চেয়েছে। এমন বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে ইভিএমে নির্বাচন করতে চাচ্ছে। এই মেশিনে ভোট কারচুপি করলে, তার কোনো প্রমাণ থাকে না। আবার প্রমাণের অভাবে সংক্ষুব্ধ হয়ে কেউ আইনের সহায়তা নিতে পারবে না। আমরা এখনো ইভিএমে নির্বাচন চাই না।
দেশ মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে চুন্নু আরও বলেন, ৫১ শতাংশের বেশি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন ব্যায় বেড়েছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মানুষ বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছে। অভাব-অনটনে শিশুখাদ্য কিনতে পারছে না। অসুস্থ্য মানুষের চিকিৎসা হচ্ছে না অর্থাভাবে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার। এ কারণে লোডশেডিংয়ে অসহনীয় অবস্থা। মানুষ জীবন চালাতে হিমশিম অবস্থা।
আরও পড়ুন : মুক্তিযুদ্ধে সাজেদা চৌধুরীর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে: জিএম কাদের
তিনি বলেন, যখন মানুষ অর্থনৈতিক কষ্টে জীবন চালাতে পারছে না তখন কার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইভিএম কিনতে চাচ্ছে। যদি রাজনৈতিক দলের মতামতের গুরুত্ব নাই দেয়া হয় তাহলে কেন তাদের সাথে দফায়-দফায় আলোচনা করা হলো। দেশের মানুষ জানতে চায়, কার স্বার্থে ইভিএমে নির্বাচন করতে চাচ্ছে? নির্বাচন কমিশন কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কাজ করছে? যারা মানুষের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে দেশের মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না। জনতার আদালতে ভোটাধিকার হরণকারীদের বিচার একদিন হবেই?
এ সময় আগামী নির্বচনে তিনশো আসনেই প্রার্থী দেবার ঘোষণা দেন মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে চায় না। দুটি দল দেশে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি সেই বিকল্প শক্তি হতে চেষ্টা করছে।
লতিফ সরকারের সভাপতিত্বে ও কাজী মামুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের, মো. ইউসুফ আজগর, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এম এ রাজ্জাক খান, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আজহারুল ইসলাম সরকার, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় সদস্য মখলেছুর রহমান বস্তু, ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, মহিউদ্দিন ফরাজী, রবিউল ইসলাম, ভূমিহীন সংগঠনের নেতা এস এম আমিনুল হক সেলিম, শফিকুল ইসলাম লিপন, মো. মুজিবুর রহমান, মো. তরিকুল ইসলাম তপু, মো. দেলোয়ার হোসেন, উচান মং রাখাইন প্রমুখ।
]]>