বাংলাদেশ

‘ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা নেই, তবে ভোট দিতে সমস্যা হতে পারে’

<![CDATA[

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণে কারচুপির আশঙ্কা নেই। তবে ভোট দিতে অনেকের সমস্যা হতে পারে, সময়ও লাগতে পারে। এটি ভোটারদের জন্য বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ইভিএম নিয়ে জনমনে অনাস্থা দূর না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে মনে করেন তারা।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে ‘এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও ইভিএম’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

তারা বলেছেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে বিমানবন্দরেও সমস্যায় পড়তে হয়। ভারতেও ভিভিপ্যাটের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন ভোটারদের আস্থা না থাকলে ইভিএমে যত ভালো নির্বাচনই হোক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ জন্য আস্থা ফেরানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেন তারা।

তবে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে হাজার কোটি টাকা দিয়ে ইভিএম কেনার তোড়জোড় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বৈঠকে অংশ নেয়া একজন নির্বাচন পর্যবেক্ষক। এ ছাড়া ইভিএম মেশিনে ভোট কারসাজির সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ।

আরও পড়ুন: ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো সভা

এডিটরস গিল্ড সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় বৈঠকে সূচনা বক্তৃতা করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও এডিটরস গিল্ডের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাঈমুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, সবকিছু নিয়েই পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক হয়। তবে ইভিএম নিয়ে কমন গ্রাউন্ডে আলোচনা হতে পারে। সঠিক-বেঠিকের বিষয় নয়। এর কতটা ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে, তা আলোচনা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকে না গিয়ে ইভিএমে ভোটগ্রহণ কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটাই আলোচনার বিষয়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে বিমানবন্দরেও সমস্যায় পড়তে হয়। ভারতেও ভিভিপ্যাটের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন ভোটারদের আস্থা না থাকলে ইভিএমে যত ভালো নির্বাচনই হোক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষাবিদ, লেখক ও প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি ইভিএমের বিভিন্ন অংশ দেখতে খুলে রাখতে বলেছিলাম। আমাকে যে মেশিনটি দেখানো হয়েছে, তার হার্ডওয়্যার থেকে শুরু করে সবকিছু আমি দেখেছি। তারা খুব সুন্দরভাবে এটি করেছেন। ক্যাবলসহ সবকিছু স্পেশালি কাস্টমাইজড করে তৈরি করা। অন্য কোনো যন্ত্রাংশ বা ডিভাইস এতে যুক্ত করার সুযোগ নেই। এ জন্য তাদের (উদ্ভাবকদের) কংগ্র্যাচুলেট করতে চাই।’

বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন, ইভিএমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সবকিছু লকড। তারপরও কথা রয়েছে। এ মেশিন সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে না। এটাও এর কারণ হতে পারে। এটি মাঠপর্যায়ের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তখনই হবে, যখন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আস্থা আসবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সেই আস্থা আছে কি না, সেটি বেসিক প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে ইভিএমে ভোট হওয়ার পরও সীমাবদ্ধতাগুলো আমরা দেখেছি। এর মধ্যে বুথ ক্যাপচারও আছে।’

ইভিএম উদ্ভাবন কমিটির সদস্য ও বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ভোটকেন্দ্র দখল, একজনের ভোট আরেকজনের দেয়া, আগের রাতেই ভোট দেয়া, ভোটের পর ফল পরিবর্তন হয়ে যাওয়া–এসব বন্ধ করতেই ইভিএম আনা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে এগুলোর কোনোটিই সম্ভব নয়। এটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, ইন্টানেটসহ কোনো ধরনের সংযোগ নেই। এক্সটারনাল ডিভাইসও যুক্ত করার সুযোগ নেই। ফলে ইভিএমে স্বচ্ছভাবে ভোট গ্রহণ করা সম্ভব। কোনো ধরনের কারচুপির সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন: দেশের মানুষ মনে করে ইভিএম হচ্ছে কারচুপির মেশিন: জাপা চেয়ারম্যান

মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী খুশি কবীর বলেন, ‘২০ বছর ধরে যত মেশিনে আমি ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছি, এ ক্ষেত্রে আমার সমস্যা হয়ে আসছে। এখন ইভিএম সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুবই কম। অনেক দেশে এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মূল বিষয় হলো, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এ জন্য সবার আস্থা ফেরাতে হবে।’

নির্বাচন পর্যবেক্ষক মনিরা খান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এত হাজার কোটি টাকা দিয়ে কেন ইভিএম কেনার কথা হচ্ছে, দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি সেই প্রশ্নটি রাখতে চাই।’

]]>

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!