Feni (ফেনী)ফেনীসোনাগাজী

ফেনী-মিরসরাইয়ে বালু নিয়ে রক্তের খেলা, নিঃস্ব নদী তীরের মানুষ

বিশেষ প্রতিবেদক->>

কখনও ফেনীর পক্ষ তো কখনও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পক্ষ। যে যেখান দিয়ে পারছে ফেনী ও মুহুরী নদী থেকে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছে না কোনো পক্ষ। অনিনিয়ন্ত্রিত এ বালু উত্তোলনকে ঘিরে তীরঘেঁষা মানুষের যে মরণ দশা তাও দেখার কেউ নেই। এমনটাই অভিযোগ করছিলেন ফেনী নদী তীরে বসবাস করা ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার পূর্ব সোনাপুরের বাসিন্দারা।

ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন স্থানীয় জানান, বালুর এ খেলায় নদী পাড়ে রক্ত ঝরে। গুলির আওয়াজে কেঁপে উঠে নদীর তীর। কখনও কেউ জিতে কেউবা হারে। শক্তির এ খেলায় দুই পক্ষই গড়ছে সম্পদের পাহাড়। বালুর খেলায় এখানে টাকা ওড়ে।

অপরদিকে নি:স্ব হচ্ছে খেটে খাওয়া গরিব অসহায় সাধারণ মানুষ। এদিকে বালু তোলার ফলে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি, টিউবওয়েল থেকে শুরু করে সর্বস্ব।

শুক্রবার (১৪) অক্টোবর বিকালে ফেনী নদীর সোনাগাজীর কলমির চর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের মিরসরাই বারইয়ার হাট পৌর সভার মেয়র রেজাউল করিম খোকনসহ তিনজন আহত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়দের কাছ থেকে এসব তথ্য উঠে আসে।

ফেনী নদী তীরের সাধারণ মানুষরা জানান, বৈধ-অবৈধ যেভাবেই হোক। নদীর বালুর খেলায় রাঘব-বোয়ালরাই লাভবান, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

এক সময়ের নদী পাড়ের বাসিন্দা সোনাগাজীর পূর্ব সোনাপুর এলাকার ষাটোর্ধ আবদুল হক বলেন, প্রভাবশালীদের এ অনিয়ন্ত্রিত বালু তোলার কারণেই নদীগর্ভে চলে গেছে তাদের বাড়ি-ঘর।

তিনি আরও বলেন, নদীতে বাড়ি ভেঙ্গেছে বছর পাঁচ আগে। এখন অনেক কষ্টে এক টুকরো জমি নিয়ে রাস্তার পাশে বাড়ি করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিক, সেলিম, কাশেম ও হারুনসহ আরও বেশ কয়েকজন জানান, বিগত ২০ বছরে নদীর এ এলাকাতেই ১০০টির বেশি বসতি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীর ভাঙ্গনের এ চিত্র সোনাগাজী আরও অনেক এলাকা জুড়ে।

স্থানীয়রা বলছেন, আগে রাস্তা থেকে নদীতে যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে একদম রাস্তার পাশে বেড়িবাঁধের পাশে চলে এসেছে। এ পাশের বাড়িঘর ভাঙ্গে ওই পাশে চর জাগছে। নদীর এ পাড়ের ফেনীর মানুষরা নি:স্ব হলেও ওপারে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চর জাগায় তাদের ভাগ্য ফিরছে। তারা সেখানে মাছ, ধান, সবজিরসহ বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট করছে।

জয়নাল আবেদীন নামের আরেক বাসিন্দা জানান, নদীর পাড়ে তার বাড়ি ছিল। নদী সেগুলো নিয়ে গেছে। এখন দক্ষিণ দিকে রাস্তার পাশে বাড়ি করেছেন। সব হারিয়ে এখন তিনি নি:স্ব প্রায়।

বালু উত্তোলনের ফলে ঘর-বাড়ি হারানোর এমন অভিযোগ করেছেন মিরসরাই অংশের মানুষরাও। তাদের অভিযোগ উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন ও হিঙ্গুলী ইউনিয়ন এলাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি মহল।

যত্রতত্র বালু তোলায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কৃষকের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়গুলো নিয়ে মাঝেমধ্যে প্রশাসনকে তৎপর থাকতে দেখা গেলেও কার্যত থামছে না অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ বিষয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

শুক্রবার (১৪) অক্টোবর বিকালে ফেনী নদীর সোনাগাজীর কলমির চর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের মিরসরাই বারইয়ার হাট পৌর সভার মেয়র রেজাউল করিম খোকনসহ তিনজন আহত হয়েছে।

আহত মেয়র খোকনের লোকজন বলছে, মিরসরাইয়ের করের হাটের একটি সরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জায়গা ভরাটের জন্য বালুর প্রয়োজন। সেই বালু তারা ফেনী নদী থেকে উত্তোলন করতে গিয়েছিলেন।

নদীর এলাকায় গেলেই ফেনীর ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন ও তার লোকজন দেশি-বিদেশি অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর হামলা করে এবং হত্যার চেষ্টা চালায়।

অপরদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী সদরের ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন বলেন, আমি এখানকার বৈধ ইজারাদার। আমার লোকজন গুলি করার প্রশ্নই ওঠে না। বারইয়ার হাট পৌরসভার মেয়র খোকন অবৈধভাবে এখানে বালু তুলছে। তারা এখানে আসার পর স্থানীয় জনগণের সঙ্গে দ্বন্দে জড়িয়েছে। তারা তাদের নিজেদের গুলিতে আহত হয়ে তার দায় ভার আমার ওপর চাপিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাইছে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মনজুরুল হক জানান, কয়েকদিন আগেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের দায়ে এখানে দুটি ট্রলারকে জরিমানা করা হয় এবং নদী দখলমুক্ত করতে ৭ দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ হোসেন দাইয়ান বলেন, হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যান মুজিবুল হক রিপনকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ২ জনকে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!