মুন্সিগঞ্জে পদ্মার ভাঙনে ২ গ্রামের সড়ক বিলীন
<![CDATA[
নতুন করে পদ্মার ভাঙনের শিকার দুই গ্রামের শতাধিক পরিবার। রাতের ব্যবধানে দুই গ্রামের যোগাযোগ সড়ক হারিয়ে গেল পদ্মার ভাঙনে।
গত বুধবার (১২ অক্টোবর) রাতে বাঘের বাড়ি এলাকায় ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যায় কয়েকটি বসত ভিটা, একটি বাগান বাড়ি ও জনপদ। মাত্র একদিনের ব্যবধানে আবারও ভাঙতে শুরু করেছে এ গ্রাম দুটি। শুক্রবার রাতে নদীর তীরবর্তী বাঘের বাড়ি হঠাৎ ভাঙতে শুরু করে। এই খবরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে শতশত নারী পুরুষ। ভাঙনের ভয়ে নদীর তীরের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সন্ধ্যায় সড়কটি দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যায় গ্রামের মুসল্লিরা। ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখে সেখানে অথৈ পানি। লৌহজংয়ের বেজগাঁও ইউনিয়নের বাঘের বাড়ি ও সুন্দিসারের নওপাড়া গ্রামের যোগাযোগ সড়কটি হারিয়ে যায় পদ্মায়। সুন্দিসার গ্রামের বড় একটি মাদরাসা ও মসজিদ এখন পদ্মার ভাঙনের মুখে।
ভাঙনের খবরে বেজগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক ইকবাল মৃধা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি ফোন কলের মাধ্যমে দ্রুত আশপাশের সবাইকে একত্রিত করে রাতেই ভাঙন অঞ্চলে বস্তা ফেলার ব্যবস্থা করেন। শনিবার (১৫ অক্টোবর) ভোর ৫টা থেকে ভাঙন রোধে বাঘের বাড়ি ও সুন্দিসারে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়ে রোববার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত বস্তা ফেলা চলে।
বর্ষা মৌসুম শেষ না হতেই নতুন করে ভাঙনের খেলা চলছে লৌহজংয়ের দুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। এর আগে লৌহজং উপজেলার মেদিনীমন্ডল ইউনিয়নের যশলদিয়া, কান্দিপাড়া, মাওয়া পুরাতন ঘাটে পদ্মার ভাঙনে ৫টি গ্রামের কয়েকশ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। এরপর কুমাভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া, শিমুলিয়া গ্রামটি বিলীন হয়ে যায়। এরপর লৌহজং তেউটিয়া ইউনিয়ন, গাঁওদয়া ইউনিয়ন ও কলমা ইউনিয়নে ভাঙনের কবলে পড়ে মসজিদ, মাদরাসা, হাট-বাজার, খেলার মাঠ, স্কুল, ফসলি জমিসহ বহু স্থাপনা। ’৯৩ সাল থেকে ভাঙনের কবলে পড়ে লৌহজংয়ের মানচিত্র ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: যমুনায় আবার ভাঙন, খোলা আকাশের নিচে দিশাহারা মানুষ
বেজগাঁও ইউনিয়নের মেম্বার মো. আবু তাহের মৃধা জানান, গত এক সপ্তাহে বেজগাঁও ও লৌহজং তেউটিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি বসতবাড়িসহ বহু স্থাপনা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) রাত থেকে পদ্মা পাড়ের লোকজন সারারাত জেগে পদ্মা ভাঙনের তাণ্ডবলীলা দেখেছে। লৌহজং তেউটিয়া ইউনিয়নের ১, ২, ৩ ও ৫ নং ওয়ার্ডে বড় নওপাড়া, সুন্দিসার ও বাঘেরবাড়ি এই তিনটি গ্রামের মানুষ এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পদ্মা পাড়ে।
এদিকে বেজগাঁও ও গাঁওদিয়া ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি গ্রাম হুমকিতে রয়েছে। লৌহজংয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে পদ্মার ভাঙন চলছে। নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ এনেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলার কাজ চলমান রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, লৌহজংয়ের তেউটিয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ৪৪৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু মাঝের কিছু অংশ এই প্রকল্পের বাইরে। যদি সেই গ্যাপগুলোও এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায় তবে ভাঙন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি জানান, ‘লৌহজং উপজেলা থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত গ্যাপগুলোতেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়কে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ভাঙনরোধ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।’
]]>