ফুঁসে উঠেছে ইমরানের কর্মী-সমর্থকরা
<![CDATA[
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খানকে রাজনীতিতে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করায় তুমুল বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। রীতিমতো ফুঁসে উঠেছে তার দলের কর্মী-সমর্থকরা।
রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে শুরু করে সবগুলো বড় শহরের রাস্তায় নেমে এসেছে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক। কোথাও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার কোথাও রাস্তা দখল করে চলছে জ্বালাও-পোড়াও। পুরুষের পাশাপাশি বিক্ষোভে অংশ নিয়ে নারীরাও।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুরের পরপরই বড় ধরনের দুঃসংবাদটি পান ইমরান খান। দুর্নীতির অভিযোগে তার ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। খারিজ করা হয়েছে তার সংসদ সদস্য পদও। এর ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তিনি।
নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে ইমরান খানের দল পিটিআই। দলটির নেতারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে শিগগিরই আপিল করবেন তারা। একই সঙ্গে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের রাজপথে নামার আহ্বান জানান তারা।
আরও পড়ুন: বিরাট দুঃসংবাদ পেলেন ইমরান খান
ডনের প্রতিবেদন মতে, দলের শীর্ষ নেতাদের আহ্বানের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বানের পানির মতো রাজপথে নেমে আসে পিটিআই’র হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী ইসলামাবাদ, করাচি, পেশোয়ার ও লাহোরসহ সবগুলো বড় শহর।
পেশোয়ারে ইসলামাবাদ-পেশোয়ার মটরওয়ের মুখ শত শত গাড়ি পার্কিং করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পিটিআই কর্মী-সমর্থকরা। বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কুয়েটায় রাস্তায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ চলছে।
পাঞ্জাবের প্রাদেশিক রাজধানী লাহোরের রাস্তায় জড়ো হয়েছেন পিটিআই’র শত শত নারী কর্মী। ইমরান খানকে অযোগ্য ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
ডন জানিয়েছে, সবচেয়ে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হচ্ছে রাজধানী ইসলামাবাদে। শহরের ফয়জাবাদ ইন্টারচ্যাঞ্জে জড়ো হয়েছেন কয়েক হাজার নেতা-কর্মী। এখানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে পুলিশ।
ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশের বাঁধা সত্ত্বেও পিটিআই সমর্থকরা ফয়জাবাদের প্রধান সড়ক আটকে দিয়েছে। এতে প্রধান ট্রাফিক বন্ধ হয়ে গেছে।
সিন্ধু প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী ও পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচিতেও তীব্র বিক্ষোভ হচ্ছে। শহরের শরিয়া ফয়সালে পিটিআই’র দলীয় অফিসের সামনে জড়ো হয়েছেন কর্মী-সমর্থকরা।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে পুলিশের একটি কনটিনজেন্ট অবস্থান নিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ওই এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সহিংসতা মোকাবিলায় জলকামান নিয়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে হাসপাতালে পাওয়া লাশ বেলুচদের!
পেশোয়ারে ইমরান খানের সমর্থকরা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো আটকে দিয়েছে। ইসলামাবাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া মূল সড়কটিও বন্ধ করে দিয়েছে তারা। পেশোয়ার বিক্ষোভের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, খাইবার পাখতুনখোয়ার মন্ত্রী তৈমুর খান ঝাগরার নেতৃত্বে বিক্ষোভ করছে বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক।
বিক্ষোভ চলছে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরেও। শহরের সড়কগুলো আটকে দিয়েছে পিটিআই’র সমর্থকরা। রাস্তায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে তারা। লাহোর বিক্ষোভের একটি টুইটারে পোস্ট করেছে পিটিআই। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শহরে মারদান এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন বিপুল পরিমাণ মানুষ।
এদিকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরার পর বিক্ষোভকারীদের হুশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। তিনি পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখার নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সাধারণ মানুষের সমস্যা দূর করুন এবং চোরের ২০-৩০ জন সমর্থকদে সরিয়ে দিন। তিনি আরও বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন এবং তাদের বলেছেন মাত্র ৫০ জন বিক্ষোভ করছে।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা ইমরান খান। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই চলতি বছরের এপ্রিলে পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান।
অবশ্য পাকিস্তানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নির্বাচিত কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তবে ইমরানের আগে আর কেউ অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হননি।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের উপনির্বাচনে ইমরান খানের জয়জয়কার
ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে আগাম নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি নতুন করে দল গোছানোর চেষ্টা করছেন ইমরান খান। সেই লক্ষ্যে কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে একের পর এক সভা, সমাবেশ ও লংমার্চ করছেন তিনি।
এতে সারা দেশে তার পক্ষে একটা ব্যাপক জনসমর্থন গড়ে উঠেছে। উপনির্বাচনগুলোতে যার প্রভাব স্পষ্ট। গত কয়েক মাসে অনুষ্ঠিত সব কটি নির্বাচনে তার দলের জয়জয়কার দেখা গেছে। এর ফলে আগামী নির্বাচনে ব্যাপক জয় নিয়ে ইমরানের আবারও ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে।
এদিকে ইমরান খানকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছিল ক্ষমতাসীন জোট। অবশেষে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হলো। পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন জানায়, সংবিধানের আর্টিকেল ৬৩ (১)-এর অধীন ইমরান খানকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এক লিখিত সিদ্ধান্তে যা বলা হয়েছে তা অনেকটা এমন: ২০১৭ সালের নির্বাচন আইনের ১৩৭, ১৬৭ ও ১৭৩ ধারায় উল্লিখিত বিধানগুলো ‘ইচ্ছাকৃত ও বেপরোয়াভাবে’ লঙ্ঘন করেছেন ইমরান খান। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কমিশনের সামনে জমা দেয়া আর্থিক হিসাবে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়েছেন তিনি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে ইমরান খানের দল পিটিআই একে ‘অপমানজনক ও বিব্রতকর’ বলে অভিহিত করেছে। এ সিদ্ধান্তকে ‘পাকিস্তানের জনগণের মুখে চপেটাঘাত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত শুধু ইমরান খানের ওপরই আঘাত নয়, এটা পাকিস্তানি সংবিধান ও পাকিস্তানি জনগণের ওপরও বড় আঘাত।’
]]>




