মনের যত্ন নিচ্ছেন তো?
<![CDATA[
শরীরের মতো মনেরও স্বাস্থ্য রয়েছে। মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়ই আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যে সমান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ভিন্ন কিছু করে থাকি। যেমন- সুষম খাবার খাই, ব্যায়াম করি। কিন্তু মনের স্বাস্থ্যের যত্নে তেমন কিছুই করি না। ফলে, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রায়সময়ই শরীর থেকে খানিকটা বিচ্ছিন্ন থাকে।
কিন্তু, আমরা জানি মনের শক্তিই বড় শক্তি। আপনার শরীরে যখন দেখবেন যে কোনও রকম সমস্যা নেই আপনি সুস্থ আছেন কিন্তু মন ভালো নেই, তখন দেখবেন যে, আপনি কোন কাজে মনযোগ দিতে পারছেন না। কিন্তু যখন মন খুব প্রফুল্ল অবস্থায় থাকে তখন শরীরে যদি অসুস্থতাও থাকে, তখন দেখা যায় আমরা কাজে মনোযোগ দিতে পারি, কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারি।
সুস্থতা বলতে আসলে আমরা কী বুঝি? আমার শরীর সুস্থ আছে কোনও রোগ নেই তাহলেই কি আমি পরিপুর্ণভাবে সুস্থ? আসলে কিন্তু তা না। সুস্থতা মানে হলো আমার শরীর সুস্থ আছে, কোন ধরণের রোগ নেই, আমার মন প্রফুল্ল আছে এবং আমার সামাজিক সম্পর্কগুলি সুস্থভাবে আমি পরিচর্যা করে যেতে পারছি। তাহলেই আমরা বলতে পারি যে আমরা সম্পুর্ণভাবে সুস্থ আছি।
আরও পড়ুন: ২০৩০ সালের মধ্যেই ক্যান্সারের টিকা, জানালেন বিজ্ঞানীরা
শরীর এবং মনের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক: আমরা যখন ভয় পাই তখন আমাদের কারও হাত-পা কাঁপে, কারও গলা শুকিয়ে যায়, বুক ধড়ফড় করে। ভয় মনে থাকলেও শরীরে আমারা সেটা অনুভব করতে পারি। তাহলে আমরা বুঝতেই পারছি যে, শরীরের সঙ্গে মন নিবিড়ভাবে জড়িত।
মনের স্বাস্থ্য বলতে বুঝায়, একজন ব্যক্তি তার যতটুকু ক্ষমতা আছে সেটা সর্বোচ্চভাবে ব্যবহার করতে পারবে, দৈনন্দিন জীবনের প্রাত্যহিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে এবং প্রডাক্টিভ কাজ করতে পারবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া স্বাস্থ্যের যে সংজ্ঞা রয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য হল সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার একটি অবস্থা। অর্থাৎ শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতিকেই সুস্থতা বা স্বাস্থ্য বলা যাবে না। উন্নত বিশ্ব শরীর এবং মনের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখে। অথচ, আমাদের মাঝে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নানা কুসংস্কার।
মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যা করতে পারি: আমাদের ব্রেইন যতগুলো কাজ করে তার যোগফল হল মন। আবেগ, প্রেষণা, মেমোরি, লার্নিং সবকিছুই আমাদের ব্রেইন থেকে আসে। কাজেই, ব্রেইনকে কার্যকর রাখার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
# ঘুম: মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাদের ভালো ঘুম হয় না তাদের হাতাশা, উদ্বেগ ইত্যাদি মানসিক সমস্যা দেখা দেয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে পারলে শরীর এবং মন দুটোই ভালো থাকবে।
# প্রিয়জন ও কাছের মানুষের সাথে সময় কাটানো: দিনের একটা সময় বেছে নিতে পারেন আপনজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। যাদের উপর আপনি ভরসা রাখতে পারেন তাদের সাথে আপনার চিন্তা, দুশ্চিন্তা, অনুভূতিগুলি শেয়ার করার চেষ্টা করবেন। তাহলে দিনে দিনে সেগুলো মনে দানা বেধে মনের উপর চাপ সৃষ্টি করবে না। যারা দূরে আছে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাদের সাথে সময় কাটাতে পারেন। পরিবারের সবার সঙ্গে মন খুলে কথা বলা, এক বেলা বসে খাওয়া এই সবই আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
# ভালো লাগার কাজ গুলো করা: আমরা নিজের জন্য একেবারেই সময় বের করি না। এই কাজ সেই কাজ শেষ করতে ব্যস্ত থাকি। দিনের একটা সময় নিজের জন্য বের করুন। রান্নাবান্না, আঁকাআঁকি, লেখালেখি যা করতে আপনার ভালো লাগে সেগুলো করতে পারেন। নিজের আনন্দের জন্য কিছু সময় ব্যয় করলে সেগুলো আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: বদ অভ্যাস বাদ দিতে চান?
# ব্যায়াম করা: নিয়মিত ব্যয়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা। ব্যায়াম আপনার মনকে চাঙা রাখতে সাহায্য করে। কাজে মনোযোগ বাড়ায়। ঘুম ভালো হয়। যাদের হালকা বা মাঝারি হতাশা আছে তাদের চিকিৎসার একটি অংশ হল ব্যায়াম।
শরীরটাকে আমরা যেভাবে যত্ন করি মনের প্রতিও সেরকম যত্নবান হওয়া জরুরি। শরীরের কোন ধরণের ব্যথা বা হাত কেটে যাওয়া, ক্ষত তার চেয়ে হয়ত কোনও কারণে মনের মধ্যে অনেক বেশি ব্যথায় আক্রান্ত, মনে হচ্ছে মনটা হয়ত কেটে গেছে। সেটাকে হয়ত আপনি শরীরের ক্ষতের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, অবহেলা করছেন। কাজেই, আপনার শরীরের ছোটখাটো কোনো সমস্যায় আপনি যেমন সাহায্য চান, বিশেষজ্ঞর কাছে যান ঠিক তেমনি মনের যে কোনো সমস্যা ফেলে রাখবেন না। প্রয়োজন অনুসারে মনোবিজ্ঞানীর কাছে যান এবং তাদের পরামর্শ নিন।
]]>